প্রশ্নফাঁসে জড়িত অভিযোগে বিমানের যারা গ্রেফতার হলো

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পাঁচ জুনিয়র কর্মকর্তা এবং কর্মচারীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ। গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার একাধিক টিম ২১ অক্টোবর সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উত্তরার বিমানবন্দর কাউলা এলাকায় ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেছে।

এসময় তাদের কাছ থেকে ফাঁসকৃত প্রশ্নের সফট ও হার্ডকপি, মোবাইল ফোন, নগদ দেড় লাখ টাকা, ব্যাংকের চেক, স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরিত দলিল, হিসাব-নিকাশের চারটি ডায়েরি এবং বিভিন্ন প্রার্থীর অ্যাডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেফতারকৃত করা হলো, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এমটি অপারেটর মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৬), এমটি অপারেটর মোহাম্মদ মাহফুজ আলম ভূঁইয়া (৩১), এমটি অপারেটর মো. এনামুল হক (২৭), অফিস সহায়ক আওলাদ হোসেন (২৯) এবং অফিস সহায়ক হারুনুর রশিদ (৪০)।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ রাজধানীর মিন্টো রোডে শনিবার (২২ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বিমান বাংলাদেশের নিয়োগ পরীক্ষায় নিয়োগ কমিটিতে থাকা জিএম এবং ডিজিএম এর সমন্বয়ে গঠিত কমিটিকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো। কমিটি প্রশ্নফাঁস রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। কিন্তু তারা তা না করে এভাবে ঢালাওভাবে... অফিসে সহকারীরা প্রশ্নটা আউট করে দিলেন। সে কারণে আমরা সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। পরবর্তী সময়ে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গোয়েন্দা প্রধান বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশের এই পাঁচ আসামি আগেও নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের সাথে আর কারা জড়িত তাও খোঁজা হচ্ছে। এ নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে তারা কত টাকার লেনদেন করেছে, এই টাকার ভাগ কার কার কাছে গেছে— সে বিষয়েও তদন্ত চলছে। বিমান বাংলাদেশে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী আরও কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এর আগেও নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। রিমান্ডে তাদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করে টাকা পয়সা নেওয়া এবং অনিয়মের বিষয় সম্পর্কে আমরা আরও জানতে পারবো। পরপর পাঁচটি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আমরা তাদের সংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে গ্রেফতার করেছি। 

এর আগে সমাজসেবা অধিদফতর, পাঁচটি ব্যাংক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নিয়োগ পরীক্ষা এসবের সব নিয়োগ পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের কারণে বাতিল হয়েছে উল্লেখ করে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, ‘আমরা সেই সময় অভিভাবকদের কাছেও অনুরোধ করেছিলাম, পরীক্ষার্থীরা কারও প্রলোভনে না পড়ে, কাউকে টাকা না দিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে পরীক্ষাটা যেন দেয়। কিন্তু কিছু অসাধুচক্র যারা এই প্রশ্নপত্রের নামে বিভিন্নভাবে প্রশ্নপত্র দিয়ে তারা মানুষকে প্রতারিত করছে। কোনও অভিভাবকই আমাদের কোনও তথ্য দেয়নি। বিভিন্ন তথ্য এবং গোয়েন্দা সূত্রের ভিত্তিতে আমরা এসব রহস্য উদঘাটন করেছি।’

একটি পরীক্ষা কমিটির কাজই হচ্ছে প্রশ্ন ছাপানো থেকে শুরু করে প্রশ্নপত্র সংরক্ষণ পরীক্ষা স্থলে পৌঁছে দেওয়া উল্লেখ করে গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘সব কাজই পরীক্ষা কমিটি করে থাকে। এই কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে ঢালাওভাবে যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হলো, কমিটি দায়-দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পেরেছেন কিনা এ বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’