‘ঘুষ-দুর্নীতি’র প্রতিবাদ করায় আইনজীবীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত স্থগিত

মানিকগঞ্জে ‘ঘুষ-দুর্নীতি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ও সহযোগীদের নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করায় আইনজীবী মাহাবুবুল ইসলামকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আদালতে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও ওই আইনজীবীর বিষয়ে নালিশ করে বার সমিতিকে মানিকগঞ্জের জেলা জজের চিঠি কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।

এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মামুন মাহবুব ও ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম।

এর আগে গত ১৯ অক্টোবর মানিকগঞ্জে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ও সহযোগীদের নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করায় মাহাবুবুল ইসলাম নামে মানিকগঞ্জ বারের ওই আইনজীবীকে ১৫ দিনের জন্য আইন পেশা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। 

একইদিন বিকালে নোটিশ পাওয়ার পরপরই আদালত চত্বরের সামনে শহীদ রফিক সড়কে ‘ঘুষের চেয়ে ভিক্ষা উত্তম, করলাম প্রতিবাদ, হইলাম বহিষ্কার’ লেখা সংবলিত প্লেকার্ড গলায় ঝুলিয়ে প্রতিবাদ করেন আইনজীবী মাহাবুবুর ইসলাম।

জানা গেছে, গত ১০ অক্টোবর জেলার আদালত প্রাঙ্গণে মাহাবুবুল ইসলামের নেতৃত্বে মানিকগঞ্জ বারের কয়েকজন আইনজীবী বিচার বিভাগের বিভিন্ন ‘অনিয়ম ও দুর্নীতি’র বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতি আর ন্যায়বিচার এক সঙ্গে চলে না, স্লোগান সংবলিত লিফলেট বিতরণ ও সহযোগীদের নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। কর্মসূচিতে তারা দাবি করেন, অ্যাফিডেভিট করতে নির্দিষ্ট ফি থেকে অতিরিক্ত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।

এক হাজার টাকার কমে কোনও নকল সরবরাহ করা হচ্ছে না। রেকর্ড রুম থেকে নথি পেতে হলে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়। জেলার বিচার বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিচার প্রার্থীদের মামলা খরচ অনেক বেড়ে যায়। এই কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য মাহাবুবুল রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন সমিতির সভাপতি জামিলুর রশিদ খান ও সাধারণ সম্পাদক নূরতাজ আলম ওরফে বাহার। লিখিত এই নোটিশ ১৫ কার্যদিবসের জন্য তাকে আইন পেশা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

পরে মানিকগঞ্জে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ও সহযোগীদের নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করায় আইনজীবী মাহাবুবুল ইসলামকে বহিষ্কারের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দাযের করা হয়।

গত ২৪ অক্টোবর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আশরাফুল ইসলাম আশরাফ রিটটি দায়ের করেন।

রিটে আইন মন্ত্রণালয় সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, দুদকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।

রিট আবেদনে মানিকগঞ্জের আদালতে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয় তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ওই আইনজীবীর বিষয়ে বার সমিতিকে মানিকগঞ্জের জেলা জজের দেওয়া চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়।