ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এখন দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে গতকাল সোমবার (২৪ অক্টোবর) ভোর থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয় বৃষ্টি। সকালের দিকে কম থাকলেও দুপুরের পর বেড়ে যায় বৃষ্টির তীব্রতা। এরসাথে যুক্ত হয় ঝড়ো বাতাস। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, সোমবার ভোর ৬টা থেকে আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ২৫৫ মিলিমিটার; যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ।
পূর্বাভাসে অধিদফতর বলছে, ঝড়ের প্রভাব চলে গেলেও নিম্নচাপের প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের অনেক অঞ্চলের আকাশ মেঘলাসহ কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এ গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টি রেকর্ড হয়েছে বরিশালে, ৩২৫ মিলিমিটার। এছাড়া বিভাগগুলোর মধ্যে বরিশাল, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল এ বছরের সর্বোচ্চ। ঢাকা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল মাদারীপুরে, ৩১৫ মিলিমিটার। এছাড়া ঢাকায় ২৫৫, টাঙ্গাইলে ২৫১, ফরিদপুরে ২১৩, গোপালগঞ্জে ১৮৮ এবং নিকলিতে ১৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে বরিশাল বিভাগে বরিশাল ছাড়াও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ২৩২, পটুয়াখালী সদরে ২১৯ এবং ভোলায় ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আর ময়মনসিংহ বিভাগের মধ্যে ময়মনসিংহে ১৩১ এবং নেত্রকোনায় ১১৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে; যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টি।
এদিকে রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে তাড়াশে ৫০ মিলিমিটার, রংপুর বিভাগে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ২৩, সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ৫৮, চট্টগ্রামের বিভাগে চাঁদপুরে ১৫৩, খুলনায় ২১৭, মোংলায় ২৩০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং শক্তি হারিয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। গতিপথ দেখে বোঝা যায় এখন নেত্রকোনা হয়ে ভারতের আসামের দিকে চলে যাবে। বরিশাল দিয়ে ঢুকে মধ্যরাতে ঢাকা হয়ে ভোরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হয়ে এখন নেত্রকোনার দিকে আছে। এই পুরো পথ পরিক্রমায় প্রচুর বৃষ্টি ঝড়িয়েছে। এ কারণ ঝড়ের গতিবেগ খুব একটা বাড়েনি। প্রায় একই গতিতে এগিয়ে গেছে সিত্রাং। সিভিয়ার সাইক্লোনের আশংকা করলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৮৮ কিলোমিটার।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়। এরপর দ্রুত দুর্বল হয়ে বর্তমানে নেত্রকোনা এবং আশেপাশের এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে অবস্থান করছে। পরবর্তী ৬ ঘণ্টার মধ্যে এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে গুরুত্বহীন হয়ে যেতে পারে।
আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু'এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্য এলাকায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।