দুর্নীতির তদন্ত করায় আমাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে: ওয়াসা চেয়ারম্যান

ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ- ওয়াসা’র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা দাবি করেছেন, প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন খাতে সংঘটিত  অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করায় তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে দুর্নীতিবাজরা।

কয়েকজন কর্মকর্তা ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংস্থার দৈনন্দিন ও প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। শুক্রবার (১৮  নভেম্বর) বাংলা ট্রিবিউনকে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা।

ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ নভেম্বর নামবিহীন শুধু ‘ওয়াসার কর্মকর্তাগণ’ আবেদনকারী হিসেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বরাবর চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে ওয়াসার বর্তমান চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে সংস্থার দৈনন্দিন ও প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, ‘ঢাকা ওয়াসার চেয়ারম্যান পদটি একটি নির্বাহী পদ না হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিভাগীয় প্রধানদের ডেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন। নথি অনুমোদন ছাড়াই তার নির্দেশ পালন করতে বাধ্য করেন। চেয়ারম্যান পদটি সম্মানীয় পদ হওয়া সত্ত্বেও তিনি বেতনভুক্ত কর্মকর্তার ন্যায় প্রতিদিন অফিস করেন। অফিসে বসে চাকরি থেকে বরখাস্তকৃত কর্মচারীদের নিয়ে আলোচনা করেন এবং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উসকে দেন।’

ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘কর্মচারীরা নিজেদের সিবিএ নেতা দাবি করে ঠিকমতো ডিউটি করেন না। কর্মচারীদের ঠিক মতো দায়িত্ব পালন করতে বললে, তারা চেয়ারম্যান স্যারের ভয় দেখান। অফিসে একটা বিশৃঙ্খলা অবস্থা বিরাজ করছে। চেয়ারম্যান স্যার কিছু ঠিকাদারকেও আরএফকিউ-তে কাজ দেওয়ার নির্দেশ দেন, যেখানে সরকারের ওটিএম করার নির্দেশনা রয়েছে। যা আমাদের জন্য সরাসরি আইন লঙ্ঘন। এতে আমাদের ওপর মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়।’

‘এমতাবস্থায় আমাদের সঠিক দায়িত্ব পালনে সহোযোগিতার জন্য চেয়ারম্যান স্যারের আইনবহির্ভূত নির্দেশ প্রদান থেকে বিরত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি।’

সূত্র বলছে, এই চিঠির প্রতি-উত্তর হিসেবে গত ১৫ নভেম্বর ওয়াসার চেয়ারম্যানকে অভিযোগের বিষয়ে মতামত চেয়ে চিঠি পাঠায় মন্ত্রণালয়।

চিঠির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওয়াসা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আরও একটা কমিটি আছে, তারা ওয়াসার নিজস্ব ফান্ড থেকে দরপত্র ও ক্রয়চুক্তি করে। এগুলোর ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করবে। ওয়াসার নিজস্ব ফান্ডে কোটি কোটি টাকার কাজ হচ্ছে। কিন্তু এগুলো বোর্ডে আসে না। বোর্ড এগুলোর খোঁজ-খবরও জানে না।  ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলোর ব্যাপারে বোর্ডকে বাইপাস করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাকে সরানোর চেষ্টা চলছে। আমাকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে প্রথম উদ্যোগ, এরপর আরও অনেক কিছু হবে। আমিও আমার চিঠির জবাব দিয়ে দেবো, দিয়ে চুপ করে থাকবো।’

অভিযোগের বিষয়ে প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথা। আমি এসব কাজ করি না, এগুলো আমার দরকার নেই। সমবায় সমিতির অর্থ লোপাটের বিষয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি অনুসন্ধান করছে। বিষয়টি তাদের সহ্য হচ্ছে না। একটা অডিট কমিটি করা হয়েছে, তারা ওয়াসার অভ্যন্তরীণ অডিটের বিষয়গুলো যে অবস্থায় আছে, তা পর্যালোচনা করে দেখছে এবং তারা একটি প্রস্তাব প্রস্তুত করছে।’

সিবিএ নেতাদের উসকে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি দাবি করেন,  এটা শতভাগ মিথ্যা তথ্য। তিনি তাদেরকে চেনেন না বলে জানান চেয়ারম্যান।

ওয়াসা চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি তাদেরকে চিনি না। শুধু একবার ওয়াসা সমবায় সমিতির নেতারা আমার কাছে সমবায়ের অর্থ লোপাটের তদন্ত করার জন্য দাবি নিয়ে এসেছিলেন। আমরা তাদের দাবি আমলে নিয়ে তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বোর্ড থেকে কিছু কমিটি করে দিয়েছি, তারা অনেক কিছু তদন্ত করছে, এগুলো তাদের সহ্য হচ্ছে না।’

ওয়াসা চেয়ারম্যান দাবি করেন, (মন্ত্রণালয়ে) চিঠি ওয়াসার কর্মকর্তারা দেননি। তিনি জানান, ‘আবেদনকারী— ওয়াসার কর্মকর্তাগণ লিখে অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। আর ‘কর্মকর্তাগণের’ নিচে স্বাক্ষর আছে মাত্র একটা। তাহলে ‘কর্মকর্তাগণ’ হন কীভাবে। আসলে এ অভিযোগ করেছেন— ওয়াসার ‘মালিক’।

চেয়ারেম্যানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে যিনি চিঠি দিয়েছেন— তিনি চিহ্নিত কিনা, বোর্ড তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেবে কিনা এবং মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে চেয়ারম্যানকে সহযোগিতা করছে না— এমন প্রশ্নে প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা জানান, ওয়াসার কিছু কর্মকর্তা বোর্ডকে অসহযোগিতা করলেও বোর্ড সদস্যরা তার পাশে রয়েছেন।