রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) পশু জবাইখানা ভবনের ছাদের ওপর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ডিএনসিসির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সলিমউল্লাহ সলুর ভাই হাবিউল্লাহ হাবু জবাইখানার একতলা ছাদের ওপর আরও কক্ষ নির্মাণ করার জন্য সিঁড়ি ও কলামের কাজ শেষ করেছেন।
ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন, ডিএনসিসির কাউন্সিলরের ভাই হাবিউল্লাহ হাবুর নির্দেশে জবাইখানার একতলা ছাদের ওপর ভবন ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছিল। বিষয়টি জানাজানি হলে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
তারা আরও জানান, এ অবৈধ অংশের নির্মাণকাজ গত আগস্ট মাসে শুরু হয়। সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এটি গত অক্টোবর মাসে পরিদর্শন করেন এবং এ অবৈধ অংশ ভাঙার নির্দেশনা দেন। কিন্তু এ অংশ না ভেঙে আবার নতুন করে নির্মাণ পাঁয়তারা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, পশু জবাইখানার পশু চিকিৎসকের কক্ষ ও শৌচাগারের পেছনে সিঁড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া একতলা ছাদের নতুন কলাম বসানো হয়েছে।
এ সময় জবাইখানার সঙ্গে লাগোয়া একটি আবাসিক ভবনের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কাউন্সিলরের ভাই হাবু মিয়া ও তার এক বিহারি সম্প্রদায়ের অনুসারী মুরাদ দাঁড়িয়ে থেকে এ অবৈধ অংশের কাজ করিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাসিন্দা বলেন, ‘তাদের অবৈধ কাজ করতে গিয়ে তারা আমাদের বাসার দেয়ালটি ভেঙে ফেলেছে। সিটি করপোরেশন থেকে বড় অফিসাররা এসে অবৈধ কাজ করতে নিষেধ করে গেছে। তারপরও তারা এ কাজটি করবে বলে শুনেছি। এখানে কাজ করলে আমাদের থাকার মতো পরিবেশ থাকবে না।’
পরিদর্শন শেষে বের হওয়ার পথে খবর পেয়ে এসে প্রতিবেদকের পথরোধ করেন বিহারি যুবক ও হাবুর অনুসারী মুরাদসহ আরও তিনজন। মুরাদ প্রতিবেদককে লিটন পরিচয় দিয়ে নানা প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে যা বলা হয়েছে, সব গুজব।’
সিটি করপোরেশনের সম্পত্তির ওপর কেন অবৈধ স্থাপন করছেন, জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘এখানে কোনও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে না। আমি এর সঙ্গে জড়িত, আপনার কাছে কোনও প্রমাণ আছে। এটা যে সিটি করপোরেশনের জায়গা, আপনি কীভাবে জানেন, আপনি কি মাপছেন?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বাজার কমিটির সহসভাপতি। বাজার কমিটি থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে ওই রুমটার ওপরে আমাদের স্টাফরা থাকতো আগে। এখানকার যে নাইট গার্ড আছে, তাদের ড্রেস এগুলো এখানে রাখতো। আমাদের কমিটির সিদ্ধান্ত স্টাফরা রুম করে ওখানে থাকবে। এ জায়গা তো সিটি করপোরেশনের না। এক হিসাবে আমরাই জোর করে রাখছি।’
এ সময় সিটি করপোরেশন থেকে তিনি কোনও চিঠি পাননি বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে ২৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সলিমউল্লাহ সলু বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আর যেই জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটা কি সিটি করপোরেশনের জায়গা?’ বলেই কল কেটে দেন তিনি।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘আমরা এ অবৈধ অংশটি পরিদর্শন করে এটাকে ভেঙে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছিলাম। আমি আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি বলে দেবো।’
কেন ভাঙা হয়নি, জিজ্ঞেস করা হলে ডিএনসিসির কারওয়ান বাজার অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেন, ‘আমি ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এটা পরিদর্শন করেছিলাম। কিন্তু আমি এটা ভাঙার স্পষ্ট নির্দেশনা পাইনি।’
ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের সম্পত্তিতে কারও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করার সুযোগ নেই। আমি এখনই নির্দেশ দিচ্ছি, যাতে কেউ এখানে কোনও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে। যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’