বিএসএমএমইউতে গরিব রোগীরা পাবে বিনামূল্যে আঁকাবাঁকা শিরা চিকিৎসা

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কাটাছেঁড়া ছাড়া রক্তনালির আঁকাবাঁকা শিরা (ভেরিকোস ভেইন) চিকিৎসায় অত্যাধুনিক আরএফএ মেশিনের উদ্বোধন করা হয়েছে। দুই থেকে তিন লাখ টাকার বদলে চিকিৎসা হবে মাত্র ৪০ হাজার টাকায়। গরিব-অসহায় রোগীরা পাবে বিনামূল্যে চিকিৎসা।

বুধবার (২৩ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি-ব্লকের ছয় তলায় ভাসকুলার সার্জারি বিভাগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব জানান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, ‘যারা দিন-রাত দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করেন, তাদের পায়ের গোড়ালিতে ও রক্তনালির শিরায় নানা সমস্যা দেখা দেয়। এই লোকগুলোর অধিকাংশেরই সামর্থ্য নেই যে দুই-তিন লাখ টাকা খরচ করে চিকিৎসা করবেন। কোনও রকম কাটাছেঁড়া ছাড়াই রক্তনালির জটিল আঁকাবাঁকা শিরায় উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে আরএফএ মেশিনের মাধ্যমে এ চিকিৎসা করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালে যেখানে এই চিকিৎসায় দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হয়, সেখানে আমাদের হাসপাতালে মাত্র ৪০ হাজার টাকা খরচ হবে। এমনকি গরিব-অসহায় রোগী যারা আছে, তাদের মধ্য থেকে ৮০ জনকে আমরা বিনামূল্যে চিকিৎসা দেবো। এ মেশিনের মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়ে এক থেকে দুই দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে বাড়িতে যেতে পারবে।’

অধ্যাপক শারফুদ্দিন বলেন, ‘কার্ডিয়াক সার্জারির জন্য প্রচুর লোক বিদেশে যায়। অথচ আমাদের হাসপাতালে এই সার্জারিগুলো হচ্ছে। রোগীদের এখন আর বিদেশ যাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।’

একটা সময় আমাদের ভাস্কুলার সার্জারিতে শুরুতে কোনও কোর্স ছিল না, শিক্ষক ছিল না এমনকি বিভাগে কোনও বেড ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আস্তে আস্তে একজন-দুজন করে শিক্ষক হয়েছে, বেডও হয়েছে। একটা পর্যায়ে এসে চলতি ৩০০টি সার্জারি এই বিভাগে হয়েছে।’

আমাদের অনেক দায়িত্ব উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, ‘জাতির জনকের নামে আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়। সুতরাং আমাদের দায়িত্ব অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি। এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা কর্মরত, তাদের সারা দেশের কথা ভাবতে হবে। কারণ সারা দেশের মধ্যে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন আমাদের এখানে হয় শুধু। এখান থেকে পাস করে শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞ হন। আর এখান থেকে পাস করেই জেলা-উপজেলায় কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন।’

প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, ‘পদ্মা সেতু হওয়ায় আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। এই সেতুর কারণে এখন খুলনা থেকেও তিন ঘণ্টার মধ্যে রোগী ঢাকায় এসে চিকিৎসা নিতে পারে। আর ওই রোগী যদি আমার স্ট্রোক সেন্টারে আসে, তাহলে সুস্থ হয়ে সাত দিনের মধ্যে বাড়ি চলে যেতে পারবে। দিনের পর দিন আর বিছানায় শুয়ে থাকতে হবে না।’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ও হল প্রোভোস্ট অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. সাইফ উল্লাহ খান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভাস্কুলার সার্জারি সার্জন ডা. সমরেশ চন্দ্র সাহা।

এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সবুজ, ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রবিকুল হাসান, সহযোগী অধ্যাপক (সার্জিক্যাল অনকোলজি) ডা. মো. রাসেল, হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রসুল আমিন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফয়সাল ইবনে কবির, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মাসুম আলম, কনজারভেটিভ ডেনস্ট্রি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আসাদুজ্জামান সারোয়ার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।