'নারী নির্যাতনের মামলাগুলো তদন্তেই বিনষ্ট হয়ে যায়'

দেশে সংগঠিত নারী নির্যাতনের মামলাগুলো তদন্তেই বিনষ্ট হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেছেন নারী নেত্রীরা। তারা বলেন, ‘অধিকাংশ নারী নির্যাতনের মামলার তদন্তে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রভাবশালীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। ঘটনাস্থলের আশপাশের মানুষের সঙ্গে কথা না বলে নিজের মনগড়া তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে।’

শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘নিঃশঙ্ক জীবন চাই: নারী নির্যাতনমুক্ত সমাজের অঙ্গীকার চাই' শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন তারা এসব কথা বলেন। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় নারী নিরাপত্তা জোট ও আমরাই পারি জোটের যৌথ উদ্যোগে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নারী নেত্রীরা বলেন, বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরিস্থিতি বিশ্লেষণে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার দৃশ্যমান কোনও পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি বরং ভয়াবহতা ও নৃশংসতা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে।

নির্যাতনের ঘটনাগুলির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারীর প্রতি নৃশংসতার ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করা সম্ভব হয়নি, দোষীদের খুঁজে বের করা বা দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়নি, যে সকল অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে তাদের দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা হয়নি। অনেক অপরাধী জামিনে মুক্ত হয়েছে, নানা কৌশলে অনেকে বিচার এড়িয়েছে।

‘নারীর প্রতি নির্যাতন আজ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ধারণ করেছে’ মন্তব্য করে তারা বলেন, ক্রমবর্ধমান হারে নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ ও নারী বিরোধী কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন এবং এসব প্রতিরোধে সরকারের যথেষ্ট সক্রিয় অবস্থান না থাকায় আমরা ক্ষুব্ধ ও উদ্বিগ্ন। এ সকল ঘটনা নারীদের ঘরে বন্দি রাখার অপচেষ্টাই শুধু নয় বাংলাদেশের সংবিধানকেও তাচ্ছিল্য করার একটি প্রয়াস। নারীর প্রতি এই নৃশংসতা নারী সমাজের উন্নয়নের জন্য হুমকি, পাশাপাশি রাষ্ট্রের জন্যও হুমকি যা বাংলাদেশের অগ্রসরমান ভাবমূর্তিকে ম্লান ও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

সংবাদ সম্মেলনে নারী নিরাপত্তা জোট ও আমরাই পারি জোটের পক্ষ হতে ৯টি সুপারিশ দেওয়া হয়। সুপারিশগুলো হলো- নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তি করতে হবে; উচ্চ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে; বিচার চলাকালে নির্যাতনের শিকার নারী, শিশু ও পরিবারের নিরাপত্তা, চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলায় সাক্ষী প্রদান প্রক্রিয়া যুগোপযোগী করতে হবে; হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

এছাড়া তারা আরও দাবি করেন, পারিবারিক নির্যাতন (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ সফল করতে হবে; ধর্ষণ, যৌন সহিংসতা, নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকারকে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে; নারী নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করাসহ সকল প্রকার বৈষম্যমূলক আইন ও নারী নির্যাতন বিরোধী আইন সংশোধন করতে হবে।

বনশ্রী মিত্র নিয়োগীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আমরাই পারি জোটের প্রধান নির্বাহী জিনাত আরা হক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর মহুয়া লিয়া ফলিয়া, হিউম্যান রাইট্স অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেটজ বাংলাদেশের ম্যানেজার প্রোগ্রাম আফসানা বিনতে আমিন, আমরাই পারি জোটের সদস্য সেলিনা আহমেদ, নারীপক্ষের সদস্য রওশন আরা, আইনজীবী বশীর আহমেদ চৌধুরী, আইনজীবী হামিদা বেগম ও নির্যাতনে শিকার হয়ে মারা যাওয়া মারুফার মা আকলিমা খাতুন।