ফারদিন হত্যার কোনও কিনারা পাচ্ছে না ডিবি ও র‌্যাব

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশের খুনিকে এখনও শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরই মধ্যে র‍্যাব এবং পুলিশ এ বিষয়ে ভিন্ন-ভিন্ন তথ্য দিয়েছে। তবে প্রকৃতপক্ষে এই খুনের পেছনে কারা জড়িত; এমন কোনও তথ্য এখন পর্যন্ত উদঘাটন হয়নি। এরই মধ্যে ফারদিন হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক মাস পেরিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও কোনও ক্লু বের করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থাগুলো।

র‍্যাবের সন্দেহে এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ‘রায়হান গ্যাং’ সম্পৃক্ত কথা উঠে আসলেও বিষয়ে এখন আরও কোনও অগ্রগতি নেই। আর ডিবি বলছে, মাদক সংশ্লিষ্টতায় খুন হয়ে থাকতে পারেন ফারদিন। তবে চনপাড়া বস্তিতে নয়, এই তরুণকে ঢাকার অন্য কোথাও খুন করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। এমন কিছু আলোচনার মধ্যেই আটকে আছে তদন্ত।

এই হত্যা মামলার মূল তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। আর এই ঘটনায় ছায়াতদন্ত করছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। মামলাটির তদন্ত নিয়ে জানতে চাইলে তদন্ত সংস্থা র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কোনও কিছু পাওয়া যায়নি, নতুন কোনও তথ্য আসলে জানানো হবে। এমনি কোনও আপডেট নেই।‘

এ প্রসঙ্গে একই সুরে কথা বলেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ডিসি রাজিব আল মাসুদও। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও আপডেট তথ্য নাই। সন্দেহভাজন কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু খুনের কোনও তথ্য মেলেনি। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। আশা করি একটি সমাধান পাওয়া যাবে।’

এদিকে নিহত বুয়েট ছাত্র ফারদিন নূর পরশের বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্তের বিষয়ে নতুন করে এখনও কিছু জানা যায়নি। আমাদের কিছু জানানো হয়নি। এমন একটা মামলা তদন্তে বের হয়ে যাওয়ার কথা, তবে কেন পাচ্ছে না জানি না। খুঁজে বের করার মতো পটেনশিয়াল তথ্য আমার এজাহারেই আছে। কিন্তু ওনারা এখনও পাননি।‘

তিনি বলেন, ‘এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং ফারদিনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড যারা করে, তারা ধরা পড়ার জন্য করে না। এছাড়া আমি যাকে অভিযুক্ত করেছি, সে এখনও মুখ খোলেনি। আমার ছেলের ফোন ট্র্যাক করে যেটা পাচ্ছেন, সেটা সে নাও হতে পারে। কারণ যখন থেকে সে তার মায়ের আড়াল হয়েছে, ঠিক তখন থেকেই সে (ফারদিন) নিখোঁজ। আমি মনে করি, তাকে কেউ তুলে নিয়ে গিয়েছে এবং মোবাইল ট্র্যাকিং করে চানপাড়ার কথা বলে হয়েছে। সেখানে তার ফোনটি হয়তো তার কাছে ছিল না। তাই আমি বলতে চাই, ফারদিন যখন থেকে নিখোঁজ হয়েছে ঠিক সেই সময়টা ধরে তদন্ত করতে হবে। তাহলে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। কারণ কোনও ব্যক্তি যখন নিখোঁজ হয়ে যায়, সে ব্যক্তির ফোনটি তার কাছে নাও থাকতে পারে।‘

তিনি আরও বলেন, ‘তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে এবং এমন জায়গা থেকে তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে সেখানের সিসিটিভি ফুটেজ কেউ পাবে না। তার মোবাইলটি অন্য কারও হাতে গিয়েছে। সে যে সেখানে গিয়েছে এমন প্রত্যক্ষদর্শীও এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই আমি বলবো, কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্যের ছড়াছড়ি হয়েছে। মোবাইল ট্র্যাক করে যে তথ্য পাওয়া গেছে, সেটাই তারা বলেছেন। আমি মনে করি ঘটনাটি যাত্রাবাড়ীর আগেই ঘটেছে।‘

আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতি পুরোপুরি আস্থা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তদন্তের কী আসবে, সেই অপেক্ষায় আমরা আছি।’

গত ৪ নভেম্বর রাজধানীর রামপুরা পুলিশ বক্সের সামনে বান্ধবী বুশরাকে নামিয়ে দেওয়ার পর নিখোঁজ হয় ফারদিন নূর পরশ। এ ঘটনায় সন্তানের দাবিতে রামপুরা থানায় একটি নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি করেন ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা। ৭ নভেম্বর শীতলক্ষ্যা নদীতে তার লাশ পায় নৌপুলিশ। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক, তার পরিবার ও সহপাঠীদের দাবি, ফারদিনকে হত্যা করা হয়েছে।

ছেলেকে হত্যা এবং লাশ গুমের অভিযোগে জড়িত থাকার অভিযোগে এনে রামপুরা থানায় ছেলের বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন বাবা নূর উদ্দিন রানা। লাশ উদ্ধারের পর থেকেই ফারদিনের বাবা দাবি করে আসছেন, তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসকরা জানান, আঘাতের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। মাথায় ও বুকে আঘাতের চিহ্ন ছিল।