বিএনপির গণসমাবেশ: ব্যস্ততা বেড়েছে পল্টন থানায়

আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে বিএনপির গণসমাবেশকে সামনে রেখে দলটির কার্যালয়ের সামনেই অবস্থিত পল্টন থানায় বেড়েছে ব্যস্ততা। থানার কোনও সদস্যেরই ছুটি নেই। যাদের ছুটি নেওয়া ছিল, তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। দুই-একজনের বিয়ের তারিখও পিছিয়ে দিতে হয়েছে। পল্টন থানার একাধিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। যদিও কার বিয়ের তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা বলতে রাজি হননি তারা।

বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ ঘিরে কোনও ধরনের নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা যেন না হয়, সেজন্য সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) প্রতিটি থানায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এরমধ্যে পল্টন থানার ব্যস্ততা আগের চেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে। এ থানার পুলিশের সব সদস্যকে রাত-দিন দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পল্টন থানায় অবস্থান করে দেখা যায়—থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), ইন্সপেক্টর (অপারেশন), ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কাউকেই তাদের চেয়ারে পাওয়া যায়নি। কিছুক্ষণ পর পর তারা বাইরে বের হচ্ছেন, আবার ফিরে আসছেন। অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া এবং ইন্সপেক্টর হিরন্ময় (অপারেশন) দুজনকেই বারবার বের হতে ও ফিরে আসতে দেখা যায়। ইন্সপেক্টর (অপারেশন) হিরন্ময় বারুরীকে একটু পরপর বিএনপি অফিসের সামনে গিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের তদারকি ও নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে।

বিএনপি অফিসের সামনে কর্মব্যস্ত পল্টন থানার পুলিশ সদস্যরাপল্টন থানার বিপরীত পাশে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। সোমবার দুপুর ২টার দিকে দেখা যায়, অর্ধেক রাস্তা দখল করে বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের গ্রেফতারকৃত নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। ফলে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই মিছিল, মিটিং ও অভিযানকে কেন্দ্র করে বাড়তি কাজ করতে হচ্ছে পল্টন থানার পুলিশকে।

পল্টনে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না সরকার। সরকারের তরফে বলা হচ্ছে— বিএনপিকে সমাবেশ করতে হলে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই করতে হবে, পল্টনে নয়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৬টি শর্তে সমাবেশ করার অনুমতিও দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি চাচ্ছে, বিএনপি যেন সেখানেই সমাবেশ করে।

এ প্রসঙ্গে পল্টন মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাজের চাপতো বেড়েছেই। তবে এজন্য নতুন করে আমরা কোনও রোস্টার বানাইনি। আগের রোস্টারেই  ডিউটি করছি।’

পল্টন থানার আরেকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কাজের চাপ আগের চেয়েও দ্বিগুণ বেড়েছে। আমাদের প্রচুর কাজ করতে হচ্ছে। যারা অফিসার আছেন, তাদেরও রাত-দিন ডিউটি করতে হচ্ছে। নিয়ম হলো, যারা নাইট ডিউটি করেন, পরের দিন তারা ফ্রি থাকবেন। এখন দেখা গেছে, নাইট ডিউটি করে দিনে আবারও ডিউটিতে আসতে হচ্ছে। অনেকের স্ত্রী-সন্তানরা রাতে একা থাকতে ভয় পায়। কেউ কি চান স্ত্রী-সন্তানকে বাসায় একা রাখতে? কিন্তু অসহায় হয়ে আমাদের রাখতে হচ্ছে। তিনি বলেন, অফিস ছাড়াও আমাদেরও তো একটা পারিবারিক জীবন আছে। আমাদেরও স্ত্রী-সন্তান আছে। অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। বউ-বাচ্চারা অসুস্থ হতে পারে, তাদের হাসপাতালে নেওয়া, এগুলোতেও আমরা কোনও সময়ই দিতে পারি না। প্রতিদিনই  অফিসে আসতে হচ্ছে।’

পুলিশের আরেক ইন্সপেক্টর নাম প্রকাশ না করে বলেন, সকালে অনেকেই ৮টায় অফিসে আসছেন। আমরা ৯টায় আসছি। যিনি ৮টায় আসছেন, তার রাত ৮টার সময় ডিউটি শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এখন সে ডিউটি শেষে ৮টায় যেতে পারছেন না। বাড়তি কাজ ও  অভিযান শেষ করে বাসায় ফিরতে হচ্ছে রাত ১২টায়। সামনের কয়েক দিন এমনও হতে পারে যে আমরা বাসায়ও যেতে পারবো না। থানাতেই অবস্থান করতে হতে পারে। রোস্টার পরিবর্তন না করলেও মুখে মুখেই দায়িত্ব বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। ডিউটির বাইরেও অনেক কাজ আছে, যে কাজগুলোর পেছনে প্রচুর সময় দিতে হচ্ছে।

বিএনপির গণসমাবেশকে সামনে রেখে কাজের চাপ বেড়েছে পল্টন থানা পুলিশেরসংশ্লিষ্টরা জানান, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নভেম্বরের ২০ তারিখের পরই থেকেই তাদের কাজের চাপ বেড়েছে। যত দিন যাচ্ছে, ততই কাজের চাপ বাড়ছে। এই চাপটা ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবেই।

জানা গেছে, সিনিয়র-‍জুনিয়র ও পুলিশ কনস্টেবলসহ পল্টন থানার মোট জনবল ১৫৭ জন। যা বর্তমান সময়ের জন্য পর্যাপ্ত নয় বলে জানান কর্মকর্তাদের কেউ কেউ।

এক কর্মকর্তা জানান, দেখা গেলো কেউ ডিউটি করে বাসায় গেলেন, আবার ফোন পেয়েই তাকে থানায় ছুটে আসতে হচ্ছে। এভাবে হরহামেশাই হচ্ছে। কেউ হয়তো ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছেন, ছুটি না কাটিয়েই তাকেও চলে আসতে হয়েছে। কেউ কেউ বিয়ে করার প্রস্তুতি নিতে ছুটি নিয়েছেন। সেটাও তাকে পিছিয়ে দিতে হচ্ছে।