সড়কে রাজনৈতিক কর্মসূচি: আইন কী বলছে?

জনগণের চলাচল বন্ধ করে সড়কের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি খুবই নিয়মিত ঘটনা বাংলাদেশে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন সড়কের নিয়মিত যাত্রী, পথচারী ও পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। অস্থিতিশীলতার শিকার হওয়ার আতঙ্কে ভোগেন তারা।ফলে মানুষের চলাচলের পথ বন্ধ করে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করা কতখানি সংবিধানসম্মত বা আইনসিদ্ধ তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

সালমা হোসেন নামের এক আইনজীবী জানালেন, গত বুধবার (৭ ডিসেম্বর) তিনি বাসে চড়ে পল্টনের উদ্দেশে রওনা হন। সেদিন বিকালে ওই এলাকায় রাজনৈতিক কর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। কাকরাইলে এসে দলে দলে রাজনৈতিক কর্মীদের জড়ো অবস্থায় দেখতে পেয়ে বাসের কন্ডাকটর হঠাৎ করে বাসের দরজা বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি গাড়ি ভাঙচুরের ভয়ে একরকম লাফিয়ে রাস্তা পার হয়ে গলির ভেতর দিয়ে পল্টনের দিকে হেঁটে যান।

শহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ব্যবসায়ের কাজে রোজ জাতীয় প্রেসক্লাব-গুলিস্তান লাগোয়া সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। সেখানে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলগুলো জড়ো হয়। সভা-সমাবেশ-র‌্যালি হয়। বাসে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হয়। মানসিকভাবে তখন নিজেদের খুব অসহায় মনে হয়। আমাদের (জনগণ) ভালোর জন্যই যদি রাজনীতি হয়ে থাকে তাহলে বারবার আমাদেরই এসব ভোগান্তিতে কেন পড়তে হবে?

সালমা হোসেন কিংবা শহিদুল ইসলামের মতো এমন অসংখ্য যাত্রী কিংবা পথচারী আছেন যারা কিনা রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিতে ভুগতে থাকেন। আর এর দায় তারা রাজনৈতিক নেতাদেরকেই দিতে চান।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অরাজকতা সৃষ্টির রুখে দেওয়ার বিষয়ে দণ্ডবিধি আইনে বিধান রাখা হয়েছে। চলাচলের বিষয়টি প্রতিটি নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার। তাই নাগরিকদের চলাচল বাধা সৃষ্টি করা নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী। তাই যে কোনও সমাবেশ শহরের বাইরে খোলা জায়গায় করা উচিত। পৃথিবীর কোথাও রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ বা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের নজির খুব একটা চোখে পড়ে না।

তবে ভিন্ন মত তুলে ধরলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল মোমেন চৌধুরী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকে এ পর্যন্ত সব সমাবেশ-মিটিং-মিছিল করার জায়গা হচ্ছে রাজপথ। এসব করা সাংবিধানিক অধিকার। ভারতের সুপ্রিম কোর্টও তাই বলেছে। তবে সেসব কর্মসূচি অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হতে হবে। এসবের জন্য রাজপথই হচ্ছে উপযুক্ত জায়গা। মাঠ তো খেলার জন্য।

সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের যে রাজনৈতিক সংষ্কৃতি, এগুলো সড়ক বন্ধ করেই করে। এটা সবাই করে, সব জায়গায় হচ্ছে। সরকারি দল করলে এসব কথা তোলা হয় না। বিরোধীদলের সময়, নির্বাচনের সময় কথা ওঠে। বিগত জাতীয় নির্বাচনে এমনটা হয়েছিলো। সরকারি দলের ক্ষেত্রে ও বিরোধীদলের ক্ষেত্রে একেক নীতি কাম্য নয়। একেক জায়গায় একেক নীতি হতে পারে না। সড়কে এসব কর্মসূচি পালনে কোনও সাংবিধানিক ও আইনি প্রতিবন্ধকতাও নেই। তাই এসব কর্মসূচি তারা পালন করতেই পারে।