সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার

‘অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন’

নির্বাচন কমিশনকে আস্থা অর্জন করার পরামর্শ দিয়ে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবু হেনা বলেছেন, ‘অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন, সেটি কোনও নির্বাচনই নয়। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে সবার আস্থা অর্জন করতে হবে। তাদের কাজের মাধ্যমে দেখাতে হবে যে তারা নিরপেক্ষ।

বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন আয়োজিত ‘দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের তথ্যাবলি’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে ডেইলি স্টার ভবনে এ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। এ ছাড়াও বিশিষ্টজনেরা আলোচনায় অংশ নেন।

সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে অগাধ ক্ষমতা দিয়েছে উল্লেখ করে আবু হেনা বলেন, ‘আইন ও সংবিধান নির্বাচন কমিশনকে যে অগাধ ক্ষমতা দিয়েছে, সেই ক্ষমতা সম্পর্কে কমিশনকে সচেতন হতে হবে। তাদের দায়বদ্ধতা কেবল সংবিধান ও জনগণের কাছে, অন্য কারও কাছে নয়। নির্বাচনি কাজে গাফিলতি পেয়ে যে কারও বিরুদ্ধেই ইসি ব্যবস্থা নিতে পারে। ইসি সেটি বুঝতে পারলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে সাবেক এই প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘‘রাজনৈতিক দলগুলোকে শুধু আসেন আসেন বললেই হবে না। ইসিকে কাজের মাধ্যমে আস্থা অর্জন এবং নির্বাচনি মাঠ তৈরি করতে হবে। সবার কাছে দৃশ্যমান নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। সবাইকে ডাকতে হবে। সবাইকে নিয়েই নির্বাচন। প্রয়োজনে দলগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদা বসতে হবে, আলোচনা ও যোগাযোগ করতে হবে। ইসির আন্তরিকতা থাকলে সবাই আসবে। আসল নির্বাচন হবে উৎসবমুখর। ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’ সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে ইসিকে এখন থেকেই কাজ করতে হবে।’’

তথ্য যাচাই-বাছাই করলে বেশিরভাগ প্রার্থীরই প্রার্থিতা থাকবে না, এমন মন্তব্য করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে (আরপিও) কিছু ধূসর বিষয় আছে। প্রার্থীদের নির্বাচনি হলফনামায় দেওয়া তথ্যগুলো পুরোপুরি যাচাই-বাছাই করলে বেশিরভাগ প্রার্থীরই প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যাবে। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে শাস্তি কী হবে—তার কথাও উল্লেখ নেই আরপিওতে। সেজন্য আরপিওতে অনেক কিছু সংযোজন করা দরকার। তবে তথ্য দিয়েই বা কী হবে। তথ্য দিয়ে তো আর ভোট হয় না। বর্তমানে ভোট কীসে এবং কীভাবে হয়, তা সবারই জানা। আসলে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ভোটের পদ্ধতিই পরিবর্তন করতে হবে।’

রাতের ভোটের অভিযোগের কথা তুলে ধরে সাবেক এই ইসি বলেন, ‘যেখানে যেখানে রাতে ভোট হয়েছে, ইসি চাইলে সেগুলো বাতিল এবং গেজেট বন্ধ করে দিতে পারতো। কিন্তু তারা সেটি না করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।’