বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের ফোনালাপ প্রাতিষ্ঠানিক করতে চায় কারা কর্তৃপক্ষ

দেশের সব কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে তাদের স্বজনদের ফোনে কথা বলার পদ্ধতি ‘স্বজনলিংক’ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালু করতে চায় কারা কর্তৃপক্ষ। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে অস্থায়ীভাবে সপ্তাহে একদিন মোবাইল ফোনে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন বন্দিরা। এবার এই পদ্ধতি স্থায়ীভাবে করতে চায় কারা কর্তৃপক্ষ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে কারা অধিদফতরের পক্ষে এআইজি প্রিজন্স (প্রশাসন) মো. মাঈন উদ্দিন ভুঁইয়া সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে বেশ কিছু প্রস্তাব দেন। এরমধ্যে বন্দিদের সঙ্গে নিজ পরিবারের সদস্যদের কথা বলার জন্য নেওয়া স্বজনলিংক কার্যক্রমের বিষয়টিও তুলে ধরেন।

সেখানে তিনি উল্লেখ করে বলেন, ‘কারাগারে ফোনবুথ ‘স্বজন’ স্থাপন কার্যক্রম প্রাতিষ্ঠানিক করা গেলে কারাবন্দিরা স্বজনদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলার সুযোগ পাবে। প্রতি সপ্তাহে একদিন নিকটতম আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে পারিবারিক ও আইনি সহায়তার বিষয়ে কথা বলতে পারবেন।’

কারা সূত্র জানায়, কারাগারকে সংশোধনাগারে রূপান্তরের অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা ‘স্বজনলিংক’ প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, পর্যায়ক্রমে প্রকল্পটি দেশের সব কারাগারে সম্প্রসারণ করা হবে। কিন্তু অস্থায়ীভাবে কথা বলার প্রক্রিয়া চালু থাকলেও স্থায়ীভাবে সেটা এখনও সম্ভব হয়নি।

বর্তমানে দেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫টি জেলা কারাগার রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশনের (এটুআই) আওতায় ‘স্বজনলিংক’ প্রকল্পটি নেওয়া হয়। এর আওতায় বন্দিরা পরিবারের দুই সদস্যের মোবাইল নম্বরে মাসে দুবার সর্বোচ্চ ১০ মিনিট কথা বলতে পারবেন। এতে মিনিটপ্রতি এক টাকা করে খরচ নেওয়া হয়।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কারা কর্তৃপক্ষ প্রতি সপ্তাহে একবার স্বজনদের সঙ্গে বন্দিদের কথা বলার সুযোগ দেয়। প্রতিবার ১০ মিনিট করে বন্দিরা কথা বলতে পারেন। তবে কিছু কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে বন্দিদের বিভিন্ন সময় কথা বলার সুযোগ করে দেন। এ জন্য এ প্রক্রিয়াটি যত দ্রুত সম্ভব প্রাতিষ্ঠানিক করা প্রয়োজন। এ জন্য কারা কর্তৃপক্ষেরও আন্তরিকতা রয়েছে। মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সব কারাগারে আলাদাভাবে বুথ স্থাপন করে ‘স্বজনলিংক’ চালুর প্রক্রিয়া চলছে। যার মাধ্যমে বন্দিরা সহজেই স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। তখন বন্দিরা চাইলে ভিডিও কনফারেন্স বা টেলিফোনের মাধ্যমে কথা বলতে পারবেন। দূরের স্বজনদের কারাগারে গিয়ে বন্দির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে না। সাধারণ বন্দিরা এই সুবিধা পাবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের এ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না, ভবিষ্যতেও তারা সুবিধার আওতায় আসার সম্ভাবনা কম। তবে কারাবিধি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে তাদের সঙ্গে স্বজনরা দেখা করতে পারবেন। নিরাপত্তার খাতিরে সব ফোনালাপের সময়েই কারা কর্মচারীরা ছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থার একজন সদস্য সেখানে উপস্থিত থাকবেন এবং তাদের ফোনালাপ রেকর্ড করবেন।’

স্বজনলিংকের কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে কারা অধিদফতরের এআইজি প্রিজন্স (প্রশাসন) মো. মাঈন উদ্দিন ভুঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্বজনলিংক’ কার্যক্রম প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক চালু করা হয়েছিল টাঙ্গাইলে। সেটার আদলে তারা সারা দেশের কারাগারগুলোয় বুথের মাধ্যমে এই কার্যক্রম স্থায়ীভাবে চালু করতে চান।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বজনলিংক’ হচ্ছে কারাগারে আলাদা বুথ স্থাপন করে সেখান থেকে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের কথা বলার ব্যবস্থা। বর্তমানে যেটা চলছে তা হলো অস্থায়ীভাবে মোবাইল সেটে সিম ঢুকিয়ে তাদের কথা বলানো। বুথের মাধ্যমে টিঅ্যান্ডটি লাইন কিংবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কথা বলার স্থায়ী প্রক্রিয়াটা চালু করার জন্য সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। যেটা কারা অধিদফতরের উন্নয়ন বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।