সাংস্কৃতিক চর্চা থাকলে জাতি কোনও দিন ইতিহাস ভুলবে না: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘সাংস্কৃতিক চর্চা যদি থাকে, তাহলে সে জাতি কোনও দিন তার ইতিহাস ভুলবে না। আমাদের যে সংস্কৃতি, যে লোকসংগীত, যে সম্পদ হারিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো আবারও সংরক্ষিত করতে হবে। আমাদের ভাটিয়ালি, উত্তরাঞ্চলের গান আমাদের গর্বের জিনিস। অনেক দেশের কাছে এগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসে বিস্ময়ের জিনিস।’

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ অডিটরিয়ামে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘সাংস্কৃতিক স্কোয়াড’র সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরে আমরা একটি হোঁচট খেয়েছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের গায়ে চিমটি কেটে দেখতাম আমরা বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি। আমরা রাজাকার-আলবদরের গাড়িতে পতাকা দেখেছি, এটাও আমাদের সহ্য করতে হয়েছে। এাটও দেখেছি ইনডেমনিটি বিলের মাধ্যমে বিচারকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এলেন এবং এ দেশ ঘুরে দাঁড়ালো। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার তিনি করলেন। বিচারের রায় একের পর এক কার্যকর হচ্ছে। বাকি যে কজন আছে, অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হবে ইনশা আল্লাহ।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যখন হারিয়ে গিয়েছিলাম, অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে গেছিলাম, তখনই একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আলোর দিশারি হয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। এই সংগঠনটি আমাদের একত্র করলো, আমাদের মনের কথাগুলো তারা জানিয়ে দিলো। জাহানারা ইমাম গণ-আদালতের মাধ্যমে গোলাম আজমের ফাঁসির রায় ঘোষণা করলেন, আমাদের প্রাণের কথাটা জানিয়ে দিলেন। তারপর থেকে আমরা পিছিয়ে নেই, আমরা চলছি।’

ঘাতক দলাল নির্মূল কমিটিকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোথায় যেতে হবে, সে জায়গা আপনারা আলোকিত করে চলবেন। আমরা সে জায়গায় যেতে চাই, বাংলাদেশ সেভাবেই এগিয়ে চলবে ইনশা আল্লাহ। আমরা কোনও উগ্রবাদকে পছন্দ করি না, জঙ্গিবাদকে এ দেশের মানুষ পছন্দ করে না। কোনও সন্ত্রাসবাদকে এ দেশের মানুষ আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় না। সে জন্যই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘এ দেশের যে সংস্কৃতি বা ভাষা, তা স্তিমিত হয়েছিল বহুবার। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল দেশের মানুষ। সে স্বপ্নের সমাধি হয়েছিল জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে। তার আগে হয়েছিল ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে। ভারত ভাগের সময় বঙ্গবন্ধুই প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ হবে। ১৯৪৭ সালের ৭ আগস্ট একটি আলোচনায় তিনি প্রথম শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ভারত বিভাগ যে উদ্দেশ্যে, সেটি সম্ভবত সফল হবে না এবং আমাদের সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ হবে।’

এ সময় তিনি সভায় আলোচকদের অভিযোগের উত্তর দিতে গিয়ে বলেন, ‘একটি প্রশ্ন উঠেছে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের যে বরাদ্দ সেটি নাকি আমরা ব্যয় করতে পারি না, এটি অতীত। এখন মূল বরাদ্দ ব্যয় হয়েও আমাদের বাড়তি অর্থ লাগে। গত বছর থেকে আমাদের বাড়তি অর্থ খরচ হয়, এর আগে আমাদের অর্থ থেকে যেত। এ বছর আমাদের মূল বরাদ্দ ৬০০ কোটি, আরও অতিরিক্ত ৩০০ কোটি লাগবে।’

যাত্রার জন্য নির্দিষ্ট জায়গার কথা বলা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে জায়গা আমাদের আছে, মুক্তমঞ্চ, এটিকে ডেডিকেটেড করার প্রস্তাব অনেকের আছে, আমার মনে হয় এটি একটি অসাধারণ জায়গা হবে। কেননা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাধীনতার জায়গায়, সংস্কৃতিকে ধারণ করার জায়গা, সংস্কৃতিকে প্রাণ দেওয়া প্রতিষ্ঠান। কাজেই আমরা আলোচনার মাধ্যমে এটিকে নির্ধারণ করতে পারি।

এ সময় একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মুনতাসির মামুন, সম্মেলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন, চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীসহ আরও অনেকে।