মানবপাচারে জড়িত বিমানবন্দরের দুই কর্মী!

তারা কাজ করছিলেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তবে আড়ালে তাদের মূল পেশা ছিল মানবপাচার! ইরান ও তুরস্কে মানবপাচারকারী চক্রের প্রধান গ্রিসপ্রবাসী আলী হোসেনের হয়ে বাংলাদেশে কাজ করছিলেন তারা। এরকম তথ্যের ভিত্তিতে বিমানবন্দরের দুই কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। রাজধানীর দক্ষিণনখান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে সন্ধ্যায় সিআইডির মানবপাচার অপরাধ দমন ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- বিমানবন্দরের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অগ্রগামী ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসের কর্মী মাহামুদুল হাছান (২৭) ও সিভিল এভিয়েশন কর্মরত জাহাঙ্গীর আলম বাদশা (৪১)।

বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) নজরুল ইসলাম জানান, গ্রেফতার আসামিরা অন্য আসামিদের সহায়তায় মানবপাচার করে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে টার্গেট করা ব্যক্তিদের সংগ্রহ করে। পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে তাদের ভিজিট ভিসায় দুবাই পাঠায়। দুবাই থেকে আসামিদের সহযোগীরা তাদের (যারা বিদেশ গিয়েছে) মারপিট করে কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে ইরানি দালাল চক্রের কাছে হস্তান্তর করে। ইরানি দালাল চক্র এ দেশীয় দালালদের সহযোগিতায় সমুদ্রপথে ইরানে নিয়ে একই পন্থায় আটক রেখে মারপিট করে। এছাড়া দেশে ভুক্তভোগীদের আত্মীয়স্বজনকে মারধরের ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে মুক্তিপণের টাকা দিতে বাধ্য করে।

এসএসপি নজরুল ইসলাম জানান, গ্রিসপ্রবাসী আলী হোসেনের স্ত্রী রাশিদা বেগমকে গ্রেফতার করে সিআইডি। রিমান্ড শেষে বর্তমানে জেলে আছেন রাশিয়া। বাকি সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। তার জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া যায়। এরমধ্যে গত ১৬ জানুয়ারি আব্দুস সালাম অরফে সালামত উল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ আরও দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এছাড়া রাশিদার স্বামী আলী হোসেন ও ছেলে সাব্বির হোসেন দেশের বাইরে থাকায় তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

সিআইডি জানায়, শাহাদাত হোসেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাধারণ মানুষদের সংগ্রহ করেন। ঢাকায় পাচারের শিকার ভুক্তভোগীদের বাকি কাজ করতেন আব্দুস সালাম নামে ওই চক্রের আরেক সদস্য। আর দেশ থেকে যাওয়া যাত্রীদের রিসিভ করেন দুবাইয়ে থাকা আব্দুল হান্নান। ইরানে এই চক্রের হয়ে কাজ করে মিজাদুল ও আলীর ছেলে সাব্বির।

এর আগে গত ১০ নভেম্বর মানবপাচারকারীর বিরুদ্ধে ডিএমপির বিমানবন্দর থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা হয়। মামলা নম্বর ১২। পরে এই চক্রের প্রধান আলী হোসেনের স্ত্রী ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর এই চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতার করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিআইডির মানবপাচার প্রতিরোধ শাখা কাজ করছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।