ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করতো বিডিএসকে গ্যাং

রাজধানী আদাবরের সন্ত্রাসী গ্রুপ বিডিএসকে গ্যাংয়ের প্রধান হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয়সহ ৮ সদস্যকে দেশি ও বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এই গ্রুপটি রাজধানীতে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। তবে রাজনৈতিক ছত্রছায়ার তথ্য পায়নি সংস্থাটি।

শনিবার রাতে ফরিদপুর, রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ স্টেশন, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই গ্রুপের আটজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৪।

রবিবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

উদ্ধারকৃত অস্ত্র

গ্রেফতারকৃতরা হলো—বিডিএসকে গ্রুপের প্রধান শ্রীনাথ মন্ডল ওরফে হৃদয় ওরফে হিটার হৃদয় (২২), রবিন ইসলাম ওরফে এসএমসি রবিন (২০), রাসেল ওরফে কালো রাসেল (২৫), আলামিন ওরফে ডিশ আলামিন (২১), নোমান ওরফে ঘাড় ত্যাড়া নোমান (২১), আশিক ওরফে হিরো আশিক (১৯), জোবায়ের ইসলাম ওরফে চিকনা জোবায়ের (১৯) ও সুমন ওরফে বাইট্টা সুমন (২০)। পরে তাদের সঙ্গে নিয়ে মোহাম্মদপুরে গ্রুপের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি চাপাতি, একটি রামদা, একটি চাইনিজ কুড়াল, ৪টি চাকু, দুটি হাঁসুয়া, একটি কাঁচি ও একটি লোহার রড উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, গত ৭ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে রাজধানীর আদাবর থানাধীন তিন রাস্তার মোড় এলাকায় একজনকে জখম করে তার কাছে থাকা মোবাইল ও নগদ অর্থ ছিনতাই করে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। কিছুদিন আগে একই এলাকার এক কলেজ শিক্ষার্থীর কাছ থেকেও একই কায়দায় ছিনতাইকারীরা মোটা অংকের অর্থ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। র‌্যাব ওই সব ঘটনার তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। যেখানে দেখা যায়, ৮-১০ জনের একটি গ্যাং ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত।

 

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন

 

এই ব্রেভ ডেঞ্জার স্ট্রং কিং (বিডিএসকে) গ্রুপের প্রধান হিটার হৃদয়ের নেতৃত্বে ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছে। পরে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে করে গত রাতে আটজনকে আটক করে। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা বিডিএসকে গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য। তাদের গ্রুপে প্রায় ২০-২৫ জন সদস্য রয়েছে। গ্যাং লিডার হিটার হৃদয়ের নেতৃত্বে বিগত ২-৩ বছর পূর্বে গ্যাংটি গঠন করা হয়। গ্রুপের সদস্যরা আগে সবুজ বাংলা গ্রুপ, টপ টেন গ্রুপ ও ভাই বন্ধু গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

এই গ্রুপের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চুরি-ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল দাবি করে কমান্ডার মঈন বলেন, তারা বিভিন্ন সময় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় মারামারিসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এছাড়াও তারা মাদক সেবনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাদক ব্যবসায় জড়িত। এই গ্যাংয়ের সদস্যরা রাস্তাঘাটে ইভটিজিং, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপ্রীতিকর ভিডিও শেয়ারসহ বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িত।

হৃদয় সম্পর্কে যা বলছে র‌্যাব

গ্রেফতার গ্যাং লিডার হিটার হৃদয় সম্পর্কে কমান্ডার মঈন বলেন, বিগত ২-৩ বছর দরে বিডিএসকে গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে সে। সে স্থানীয় একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। সে গ্রুপটি পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে লেগুনার হেলপার হিসেবে কাজ করেছে। গ্যাং গ্রুপের সদস্যদের মাধ্যমে হৃদয় মোহাম্মদপুর, আদাবর ও বেড়িবাঁধ এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা পরিচালনা, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতো।

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তারা বেপরোয়া ছিল কিনা জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, তারা বিভিন্ন সময় ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারেও ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করেছে। তবে রাজনৈতিক ছত্রছায়ার তথ্য পাইনি। তবে প্রত্যেকেই একাধিক মামলার আসামি। এরমধ্যে পাঁচজনই একাধিকবার কারাভোগ করে পুনরায় একই অপরাধ কর্মে জড়িয়েছেন।

গ্রেফতারদের অধিকাংশের নামে মাদক, চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও মারামারিসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।