লেখকের কাজ চিন্তাকে খোঁচা দেওয়া: মাসরুর আরেফিন

কবি ও কথাসাহিত্যিক মাসরুর আরেফিন বলেছেন, 'লেখকের কাজ কোনও কিছুর সমাধান দেওয়া না। ওইটা অ্যাক্টিভিস্টরা করবেন। অ্যাক্টিভিস্টরা প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন৷ লেখকের কাজ আপনার প্রতিবাদটুকুসহ পুরো সিস্টেমটা উল্টো করে দেখিয়ে দেওয়া। লেখকের কাজ সমাজে যা যা চলে তা উন্মোচিত করা। লেখকের কাজ সমাজকে চিন্তাকে তুলে ধরা করা, সমাজের চিন্তাকে খোঁচা দেওয়া।'

সোমবার (৩০ জানুয়ারি) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে বাংলা বিভাগের আয়োজনে 'সাহিত্য-শিল্প বিষয়ক আলোচনা' শীর্ষক সেমিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মাসরুর আরেফিন বলেন, 'আমি প্রথাগত বিচারে লেখককেও দেখি না, বইকেও দেখি না। আমাদের এই সভ্যতার শুরু থেকে তাকালে দেখা যাবে সভ্যতার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে আমাদের জ্ঞান। আমরা যেই মুহূর্তে জ্ঞানী হিসেবে নিজেকে মনে করি সেই মুহূর্তে যাদের জ্ঞান নাই তাদেরকে মানুষ বলেই মনে করি না। আমি বইকেও খুব বড় পবিত্র কিছু মনে করি না। বইয়ের ভূমিকা পৃথিবীর সভ্যতার চাকা এগিয়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বইও শাসকগোষ্ঠীর শাসনের একটা অংশ। আমরা যারা লেখক সিস্টেমেরই অংশ। লেখক প্রতিবাদ করেই হোক, সাপোর্ট করেই হোক, সিস্টেমের মধ্যেই বাস করে। লেখালেখি করতে গেলেই আমরা জনদরদী, মানবদরদী হয়ে যাই। আমি এ ধরনের লেখা লিখতে চাই না। আমি লেখকের মানবতাবাদে বিশ্বাস করি না৷ লেখকের মানবতাবাদ এক ধরনের চ্যারিটি। যিনি জনগণের জন্য লিখলেন, মানুষের জন্য লিখলেন তিনিও এই সিস্টেমেরই অংশ।'received_5729024233886273(1)

অনুষ্ঠান উদ্বোধকের বক্তব্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন সাহিত্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আরও বিকশিত হবে৷ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য সংসদ আছে, ডিবেটিং সোসাইটি আছে, আবৃত্তি সংসদ আছে। সবগুলোর সমন্বিত প্রয়াসে শিক্ষার্থীদের চেষ্টায় এগিয়ে যাবে বিশ্ববিদ্যালয়।'

মুখ্য আলোচক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, 'একটা সময় বাংলা একাডেমির বইমেলায় প্রাণচাঞ্চল্য থাকতো৷ সেটা এখন নাই। কোথায় যেন একটি অভাব আছে। লেখালেখি করে অনেকেই সুনাম অর্জন করেছেন। কিন্তু লেখকদের মধ্যেও এক ধরনের আতঙ্ক। এখন বইমেলাতে র‍্যাব রাখতে হয় পুলিশ রাখতে হয়। এগুলো একসময় ছিল না।'

অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সাবরিন নাহার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. চঞ্চল কুমার বোস। এসময় বাংলা বিভাগে অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।