পনেরো বছরে ১০০০ মোটরসাইকেল চুরি করেছে খালেক

গ্যারেজ মেকানিক মো. খালেক হাওলাদার ওরফে সাগর আহম্মেদ। গ্যারেজে কাজ করতে গিয়ে তার পরিচয় হয় মোটরসাইকেল চোর চক্রের সঙ্গে। পরে ওই পেশা ছেড়ে চুরিতে জড়িয়ে পড়েন খালেক। ১৫ বছরে এক হাজার মোটরসাইকেল ঢাকা থেকে চুরি করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেছেন তিনি। মোটরসাইকেল চোর চক্রের সদস্য সন্দেহে খালেককে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-উত্তরা বিভাগ। জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিএমপি এসব তথ্য জানায়।

গ্রেফতারের সময় খালেকের কাছ থেকে ১২টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। তার সঙ্গে এই চক্রে আরও ৭-৮ জন সদস্য রয়েছে। চোরাই মোটরসাইকেলগুলো তারা চাঁদপুর, নোয়াখালী ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় নিয়ে বিভিন্ন লোকের কাছে বিক্রি করতেন।

খালেক জানান, ঢাকা থেকে চুরি করা মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়া হয় চাঁদপুরের শাহরাস্তি হাজিগঞ্জ থানা এলাকায়, নোয়াখালী সোনাইমুড়ি চাটখিল থানা এলাকায়, মুন্সীগঞ্জের বালুচর এলাকায় এবং বিশেষ করে হাওড় অঞ্চলের দিকে। উদ্ধার হওয়া চোরাই বারটি মোটরসাইকেল এর মধ্যে চারটি মোটরসাইকেলের মালিকের সন্ধান পাওয়া গেছে। মোহাম্মদপুর এবং দক্ষিণ খান থানায় সাধারণ ডায়েরি করা চারজনের মোটরসাইকেল শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের কাছে মোটরসাইকেলগুলো হস্তান্তর করা হবে।

IMG-20230201-WA0005

বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, গত মাসে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় তুরাগ থানায় একটি মামলা হয়। তদন্তকালে তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় জানা যায়, মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জ জেলায় অবস্থান করছে। এরপর চোরের অবস্থান শনাক্ত করে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেফতার খালেকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি গ্যারেজ থেকে ১২টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করি। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ১৫০টিরও বেশি মোটরসাইকেল উদ্ধার করি।

মহানগর ডিবি প্রধান বলেন, রাজধানী থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, মুন্সীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও হাওর অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কম দামে বিক্রি করা হয়। এসব চোরাই মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকলেও কিনে নিচ্ছেন অনেকে। ‘আমরা বারবারই বলে যাচ্ছি, কাগজপত্র নেই এমন মোটরসাইকেল কেনা অবৈধ। চোরাই মোটরসাইকেল যার কাছে পাবো তাকেই চোর হিসেবে সাব্যস্ত করবো। কারণ, চোরাই মাল কেনাও একটা অপরাধ। কেউ যদি কাগজপত্রবিহীন চোরাই মোটরসাইকেল কেনেন, তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, কেউ একজন ডুপ্লিকেট চাবি বানাতে এলে দোকানি বাড়তি আরও একটি চাবি বানিয়ে তার কাছে রেখে দেন। তারা এই কাজটি নিয়মিত করছেন। চাবির মেকানিকও এই চক্রের সদস্য। যারা নকল চাবি বানান তাদের বিরুদ্ধেও ডিবির অভিযান চলছে।

গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেল চুরি হলে তাৎক্ষণিক নিকটস্থ থানায় ভুক্তভোগীকে জিডি করার পরামর্শ দিয়ে হারুন অর রশীদ বলেন, জিডির কপিটি নিয়ে ডিবি টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে মোটরসাইকেল উদ্ধারে আমরা চেষ্টা করবো।

অভিযান পরিচালনাকারী ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার হাবিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চুরি করা মোটরসাইকেলগুলো চাঁদপুর নোয়াখালী মুন্সীগঞ্জ এবং হাওর অঞ্চলের দিকে নিয়ে যাওয়ার পর কম দামে সেখানে বিক্রি করা হতো। যেসব মোটরসাইকেলের দাম দের থেকে দুই লাখ টাকা সেসব মোটরসাইকেল গুলো বিক্রি করা হতো ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকায়। বিশেষ করে উঠতি বয়সীরা সেসব এলাকায় চোরাই মোটরসাইকেলগুলো কিনে ব্যবহার করে আসছিল। আমরা এসব বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি। মোটরসাইকেল চুরি প্রতিরোধে মোটরসাইকেল মালিকদের আরও সচেতন হওয়া জরুরি। যেখানে সেখানে পার্কিংয়ে রাখা কিংবা বাসা বাড়ির নিচে পার্কিং য়ে রাখার সময় ভালো মানের লক ব্যবহার করা এবং জিপিএস ব্যবহার করার পরামর্শ দেন তিনি।