একুশে বইমেলায় ‘বঙ্গে মানব বসতির বিবর্তন’

এই বঙ্গের ইতিহাস একটি বহুলচর্চিত বিষয়। এর উপর গবেষণামূলক কাজ বহুদিন ধরেই চলেছে। এর ফলশ্রুতিতে বাংলার ইতিহাসের অনেক তথ্যই পাওয়া গেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বাংলার মানুষজনের বসতি ও তার কারিগরি তথা অর্থনৈতিক বিবর্তন নিয়ে দুই বাংলায় কোনও প্রযুক্তিবিদ সেভাবে গবেষণামূলক কাজ করেননি। মানব বসতির বিশ্লেষণ একটি আন্তর্বিষয়ক প্রচেষ্টা। একাজে সহযোজন দরকার ঐতিহাসিক, বাস্তু নির্মাণ প্রকৌশলী নগর স্থপতি, অর্থনীতিবিদ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞের। সেক্ষেত্রে ‘বঙ্গে মানব বসতির বিকাশ’ বইটি একটি অভিনব প্রয়াস।

লেখক কৌশিক দত্ত রায় রচিত ‘বঙ্গে মানব বসতির বিবর্তন’ শীর্ষক গ্রন্থটি বের করেছে রোদেলা। বইমেলায় গ্রন্থটি পাওয়া যাচ্ছে।

প্রকাশনা সংস্থা রোদেলা জানিয়েছে, বঙ্গে কয়েক হাজার বছর ধরে মানুষের বিচরণ ও বসবাস। সেই বসতির বিবর্তন ঘটে চলেছে চাষ আবাদ না জানা যুগ থেকে আজ অবধি, এর মধ্যে বলাবাহুল্য বঙ্গে মানুষের বসতি ও জীবিকা নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। বসতি ও জীবিকা নির্ভর করেছে সেই যুগের লব্ধ প্রযুক্তি, কারিগরি বিজ্ঞানের ওপর। এই উপলব্ধি থেকেই লেখক কৌশিক দত্ত রায় বসতির বিবর্তনকে চর্চা করেছেন বইটিতে। কৌশিক দত্ত রায় কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়েছেন এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই পিএইচডি করেছেন। তার কর্মজীবন কলকাতা নগর উন্নয়ন দফতরে।

বইটিতে বাংলার বসতির ইতিহাসের চর্চা শুরু করা হয়েছে বাংলার প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই। এই পর্বে আলোচনা করা হয়েছে প্রস্তর যুগ ও ধাতু ব্যবহার শুরুর যুগে বঙ্গের মানুষের প্রযুক্তি কৌশল নিয়ে। পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক যুগে প্রযুক্তির বিকাশের সাথে বিভিন্ন মানুষজনের বাংলায় আগমন ঘটে। তাদের বিভিন্ন প্রযুক্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছে বাংলার সংস্কৃতিতে। মধ্যযুগে বঙ্গভূমিতে ইসলাম নিয়ে আসে নতুন প্রযুক্তি, বিজ্ঞান। এই সময়ে প্রথম বঙ্গের সাথে পরিচয় ঘটে উপমহাদেশের বাইরের জ্ঞান ও প্রযুক্তির। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ রাজত্ব এই উপমহাদেশে শুরু হয় বাংলা থেকেই। বিভিন্ন যুগে বাংলায় আগত এই অভিবাসী মানুষের কাছ থেকে বাংলার মানুষ অবলীলায় শিখে নিয়েছে তাদের প্রযুক্তি, খাদ্যাভ্যাস।

এই সমস্ত সময়কালকে বইটিতে আটটি পর্বে আলোচনা করা হয়েছে। বিভিন্ন আলোচনার মাঝে পাঠকের সুবিধার জন্য কতগুলো মানচিত্র ব্যবহার করা হয়েছে। বইটিতে সংশ্লিষ্ট তথ্যের সূত্র উল্লেখিত হয়েছে, যেটি ভবিষ্যতের গবেষকদের সুবিধা করে দেবে।