স্বামী-সন্তানের খোঁজে ঢাকায় এসে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার

তিন জনের দায় স্বীকার, রিমান্ডে ২

স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে এক নারী (২৯) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকারের ঘটনায় করা মামলায় তিন জন দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। অপর দিকে দুই জনের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় আল-আমিন হোসেন (২৬), সবুজ (২৬) ও শফিকুল ইসলাম (২৬) দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শেখ সাদী আসামি শফিকুলের ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নুরুল হুদা চৌধুরি আসামি সবুজের এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম আসামি আল আমিনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

অপর দিকে মামলার সুষ্ঠুতদন্তের জন্য আসামি বিল্লাল হোসেন (২৫) ও রাসেল ওরফে মোল্লা রাসেলের (২৪) সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্তা আক্তার তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে, শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর গাবতলী, ডেমরা, বসিলা ও ভোলার তজুমুদ্দিন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাদের।

ঘটনার বিবরণে থেকে জানা যায়, ভুক্তভোগী নারী (২৯) স্বামী-সন্তানসহ মোহাম্মদপুরের বসিলায় বসবাস করতেন। চার মাস আগে অসুস্থতার কারণে সন্তানদের স্বামীর কাছে রেখে গ্রামে চলে যান। এরমধ্যে কিছু না জানিয়েই স্বামী তাকে তালাক দেন।

গত ২৫ জানুয়ারি তালাকের কারণ জানতে এবং এ বিষয়ে আলোচনা করতে স্বামীর সাক্ষাতের জন্য ঢাকায় আসেন তিনি। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আগের ভাড়া বাসায় এসে স্বামী-সন্তানকে না পেয়ে আশপাশে খোঁজাখুজি করতে থাকেন। বাড়ির মালিক, ভাড়াটিয়াদের কেউই তার স্বামী-সন্তানদের ঠিকানা দিতে পারেন না। রাত প্রায় ৯টা পর্যন্ত বসিলা চল্লিশফিট, ফিউচার হাউজিং, গার্ডেনসিটি হাউজিং, স্বপ্নধারা হাউজিং ও আশপাশের এলাকায় খোঁজাখুজি করে সন্তানদের সন্ধান না পেয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি বসিলা চল্লিশফিট তিনরাস্তার মোড় থেকে গাবতলী যাওয়ার জন্য একটি রিকশা নেন।

রিকশাচালক ওই নারীকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে না নিয়ে ঢাকা উদ্যান ও বসিলা এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় ঘোরাতে থাকে এবং বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে। ওই নারীকে তার স্বামীর বাসা খুঁজে বের করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সময় ক্ষেপণ করতে থাকে।

প্রায় ৩ ঘণ্টা রাস্তায় ঘোরাঘুরি করে রাত প্রায় সাড়ে ১২টার দিকে বসিলা ফিউচার টাউনের একটি জায়গায় গিয়ে রিকশাচালক তার সঙ্গীরাসহ ওই নারীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে শ্রমিকদের জন্য তৈরি একটি অস্থায়ী টিনের ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে পাঁচ জন ভিকটিমকে হত্যার হুমকি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে নারীর চিৎকারে এলাকায় কর্তব্যরত সিকিউরিটি গার্ড ও লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা পালিয়ে যায়। পরে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করে হেফাজতে নেয় এবং চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে পাঠানো হয়।

২৭ জানুয়ারি মোহাম্মদপুর থানার এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।