গণজাগরণ মঞ্চের দশকপূর্তি

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি সংগঠকদের

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করা গণজাগরণ মঞ্চের এক দশক পূর্তি হয়েছে। দিবসটি উদযাপনে রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণসংগীত, কবিতা ও আলোর মিছিলের কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

দুই ভাগে বিভক্ত গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের সংগঠকরা কর্মসূচি থেকে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তোলেন। তারা আহ্বান জানান অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার।

ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের (বোয়ান) সভাপতি কানিজ আকলিমা সুলতানা বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ১০ বছর আগে বিস্ফোরিত হয়েছিলাম আমরা। দেশবাসী সম্মতি দিয়েছিল ওই আন্দোলনে। খুবই চ্যালেঞ্জের মুখে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। কিন্তু একাত্তরের পরাজিত শক্তি থেমে থাকেনি। তারা আমাদের অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ করছে। তবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের লড়াই চলমান রাখতে হবে।’

গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক কামাল পাশা বলেন, ‘১০০ বছর পরও গণজাগরণ মঞ্চকে মানুষ মনে রাখবে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর গণজাগরণ মঞ্চের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় যুদ্ধটা করেছি আমরা। সেদিন আমাদের স্লোগান ছিল ‘শাহবাগ জেগে থাকে, শাহবাগ ঘুমায় না’। শাহবাগ আসলে ঘুমায় না, সেটি আজ প্রমাণিত। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এখনও শেষ হয়নি। ষড়যন্ত্র আছে, আছে চক্রান্ত। এই চক্রান্ত আবার মোকাবিলা করতে হলে শাহবাগ আবার জেগে উঠবে।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘২০১৩ সালের সেই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ কলঙ্কমুক্ত হওয়ার যাত্রা শুরু হয়, যা এখনও অব্যাহত আছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে সব কাজ শেষ হয়ে যায়নি। সাম্প্রদায়িকতা দূর করা না হওয়া পর্যন্ত, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় সমন্বয় কমিটির আন্দোলন কিংবা গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন পূর্ণতা পাবে না।’

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘শাহবাগে দিন-রাত জেগে জেগে গান করেছি আমরা, প্রতিবাদী স্লোগান দিয়েছি। মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার পতন চেয়েছি, সেটি স্বাধীনতা-উত্তরকালের একটি সোনালি সময়। গণজাগরণ আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকার কারণে অনেককে হত্যা করা হয়েছে, তার এখনও বিচার হয়নি। আজ আমরা তাদের স্মরণ করছি।’

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী। গান শোনান গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক আল আমিন বাবু ও রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী মকবুল হোসেন। ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু ও রবীন আহসান আবৃত্তি করেন কবিতা। গণজাগরণ মঞ্চের কয়েকজন সংগঠন বক্তব্যও রাখেন। সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালিয়ে গণজাগরণ মঞ্চের শহীদদের স্মরণ করা হয়।

গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক খান আসাদুজ্জামান মাসুম ও এফএম শাহীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক আরিফ জেবতিক, ‘স্লোগানকন্যা’খ্যাত লাকী আক্তার, সিপিবি নেতা আব্দুল্লাহ আল-কাফি রতন, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে, সহসাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম প্রমুখ।