১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। সেদিন ঘটে গিয়েছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। সালাম,বরকত, রফিক,জব্বার, শফিউরদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা পেলাম মায়ের ভাষায় সর্বত্র কথা বলার অধিকার। সেই মহান ব্যক্তিদেরকে একুশের প্রথম প্রহরে স্মরণ করা হয়। এ জন্য প্রতি বছরই থাকে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন ও প্রস্তুতি।
এই আয়োজন ও প্রস্তুতির একটি চুম্বক অংশ হচ্ছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের আশপাশের দেয়ালগুলোতে দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতির মাধ্যমে তাদের কথা,তাদের নিয়ে কথা ও আন্দোলনের চিত্রায়ন। আর এই কাজের দায়িত্ব সবসময় পালন করে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা পরিবার। এই কাজকে তারা খুব উপভোগ করেন। একইসঙ্গে নিজেদের গর্বিত মনে করেন তারা। স্বেচ্ছা সেবার এই কাজে তাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আত্মিক প্রশান্তি বলে মনে করেন তারা।
সারা বছর শহীদ মিনার ও তার আশ-পাশের এলাকার অবস্থা যাচ্ছেতাই হলেও এখন পেয়েছে ভিন্নরূপ। শহীদ মিনারের বেদিতে শোভা পাচ্ছে আলপনা, দেয়ালে দেয়ালে মনীষী, কবি ও সাহিত্যিকদের ভাষা আন্দোলন ও ভাষা নিয়ে রচিত বাণী। দেয়ালের গ্রাফিতিতে জীবন্ত হয়ে যেন সালাম, জববার,বরকতরা স্লোগান দিচ্ছেন ‘রাষ্ট্রভাষা! রাষ্ট্রভাষা!, বাংলা চাই! বাংলা চাই!’ পারিপার্শিক অবস্থা দেখে কারও কাছে হঠাৎ মনে হতে পারে যে, তিনি বায়ান্ন’র রক্তমাখা মিছিলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করছেন সবকিছু।
এমনই আবহ তৈরি হয়েছে শিল্পীদের হাত ধরে। বরাবরের মতোই কাজ করছেন তারা। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিনা পারিশ্রমিকে,শরীর ক্লান্ত হলেও মুখে নেই ক্লান্তি চাপ। তারা মনে করেন, এমন কাজে যুক্ত থাকতে পারাটাই সবচেয়ে বড় আত্মিক প্রশান্তি।
চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী জাবেদ হোসেন বাবু বলেন, ‘প্রতি বছরই বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাদের স্মরণে এই কাজ করা হয়। আমরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে চারুকলা পরিবার আনন্দিত ও গর্বিত।’
চারুকলা বর্তমান শিক্ষার্থী সজীব ঐসর্য্য বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম ধাপ। সেখান থেকেই বাঙালিরা বুঝতে পেরেছিল যে, সংগ্রাম ছাড়া কিছুই হবার নয়। এবং আমরা সফল হয়েছি। সেই একটি মহান দিবসের আয়োজনে যুক্ত থাকতে পেরে কী যে আত্মিক প্রশান্তি, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আর এখানে সবাই স্বেচ্ছায় কাজ করেন। তাদের সবার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি অপ্রকাশ্য আত্মিক প্রশান্তি।’
ছবি: প্রতিবেদক