ভাষা শহীদদের প্রতি শিশুদের ভালোবাসা

হাবিব, আজমল, জনু, আরিফ—রাজধানীর মিরপুর বাউনিয়াবাধ এলাকার চার শিশু। নিজের হাতে গড়া শহীদ মিনার ঘিরে এলাকার অন্য শিশুদের সঙ্গে সকাল থেকে চলছে তাদের আলাপ-আলোচনা। মহান শহীদ দিবস সম্পর্কে বিস্তারিত জানা না থাকলেও কেবল মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা জানাতে এই শহীদ মিনার তৈরি করেছে তারা। তাই এলাকার বড়দের সহায়তায় বাঁশের কাঠি ও বয়ামের ঢাকনা দিয়ে বানিয়েছে শহীদ মিনার৷ পেছনের দেয়ালের রঙের দাগ ঢাকতে টানিয়ে দিয়েছে কাপড়। স্কুলের শহীদ মিনারের পেছনে সাদা কাপড় ব্যবহার করতে দেখে তারাও বেছে নিয়েছে একই রঙ।

শিশুদের মধ্যে সবার বড় ১১ বছর বয়সী হাবিব বলেন, 'প্রত্যেক বছরই আমাগো বড় রাস্তায় একটা শহীদ মিনার বানায়। তার জন্য আমরাও এইখানে (বাসার সামনের খোলা জায়গা) আমার বড় ভাইয়া আর তার বন্ধুরা মিলা এইটা বানাইছি। গতবারও বানাইছিলাম।'রাজধানীর শুক্রাবাদ এলাকায় শিশু-কিশোরদের হাতে গড়া শহীদ মিনার। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

ভাষা দিবস সম্পর্কে হাবিব ও তার বন্ধুরা জানান, 'আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি৷ আজ আমাদের বাংলা ভাষারে সম্মান জানাই।' ভাষার সঙ্গে পরে তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মিলিয়ে ফেলে৷

এই বিষয়ে পাশে থাকা আরেক স্থানীয় বয়স্ক বাসিন্দা মনজুরুল ইসলাম বলেন, 'পোলাপাইন আনন্দ নিয়া এসব বানাইছে এটাই অনেক। ধীরে ধীরে সব শিখ্যা যাইবো। মুক্তিযুদ্ধ নিয়াও যে ওগো মাথায় আসে এইডাও ভালো।’রাজাবাজার এলাকায় ইট দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়েছে শিশু-কিশোরসহ স্থানীয়রা। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

শুক্রাবাদের জাবেদ, হৃদয়, ইমন, জয়, বিজয়—এই পাঁচ বন্ধু মিলে কাঠের খুঁটি ব্যবহার করে বানিয়েছে শহীদ মিনার। তারা জানায়, প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি এলেই তারা নিজের হাতে শহীদ মিনার তৈরি করে। আগে ইট দিয়ে বানালেও এবার কাঠ দিয়ে তৈরি করেছে। শহীদ দিবসের আগের দিন থেকেই এর জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে তারা। ২১শে ফেব্রুয়ারির রাত ১২টা ১ মিনিটে এই মিনারে তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। 

শুধু নির্দিষ্ট কোনও এলাকায় সীমাবদ্ধ নয় রাজধানীর আরও অনেক এলাকায় প্রকাশ পেয়েছে শিশুদের এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। তারা ভালোবাসা জানায় শহীদের প্রতি। হয়তো জেনে অথবা না জেনে কিংবা শুধুই অনুকরণ করে। কিন্তু তাদের এই ভালোবাসাই ইঙ্গিত দেয় দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার।sha2

একুশে ফেব্রুয়ারির সকালে অনেক শিশুই তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। এদিন সরকারি ছুটি থাকায় শিশুরা বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে বেড়াতে যায় পরিবার ও বন্ধুদের সাথে।