বাংলা ট্রিবিউনের দুই কর্মীকে যেভাবে ছিনতাইকারী বানালো পুলিশ

সাব্বির ও বাবু নামে বাংলা ট্রিবিউনের দুই কর্মীকে মধ্যরাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে ছিনতাইকারী হিসেবে আসামি করে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দিয়েছে পুলিশ। রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের পর তাদের ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন।

বাংলা ট্রিবিউনের দুই কর্মী মো. সাব্বির ও মো. বাবুর স্বজনরা জানান, শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত একটার পর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানা এলাকার রায়ের বাজারের বাসা থেকে তাদের ডেকে নিয়ে যায় পুলিশ। এসআই রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাদের জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে ঘুম থেকে তুলে ডেকে নিয়ে ছিনতাইকারী হিসেবে মামলা দেয়।

স্বজনরা বলছেন, শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে বাংলা ট্রিবিউনে অফিসের কাজ শেষ করে রায়ের বাজারের বাসায় যায় সাব্বির ও বাবু। রাতের খাবার শেষে তারা ঘুমিয়ে পড়ে। রাত একটার পর মোহাম্মদপুর থানার অধীন রায়ের বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাদের ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যায়।

সাব্বিরের স্ত্রী সাথী জানান, আমাদের পাশের বাসায় অন্তর নামে একটি ছেলেকে শনিবার বিকালে ডেকে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সাব্বিরকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। সাথীর ধারণা, অন্তরকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। পুলিশ উদ্দেশ্যমূলক সাব্বিরকে ছিনতাইকারী হিসেবে চালিয়ে দিয়েছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চান। সাব্বির তার স্ত্রীকে নিয়ে এবং বাবু মা-বাবার সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকলেও মামলার এজাহারে তাদের ভাসমান ছিনতাইকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাবুর মা লাকি বেগমও একই অভিযোগ করে বলেন, ‘পুলিশ উদ্দেশ্যমূলক তার ছেলেকে ছিনতাইকারী সাজিয়েছে।’

এদিকে, মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মোহাম্মদপুর থানাধীন রায়ের বাজার বৈশাখী মাঠের উত্তর-পূর্ব কর্নারের ফাঁকা রাস্তার ওপর কয়েকজন ছিনতাইকারী ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে অবস্থান করছিল। পরবর্তীকালে ছিনতাইকারীরা পুলিশ দেখে কৌশলে পালানোর চেষ্টা করলে জনসাধারণের সহায়তায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। যদিও তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে কোন তথ্যের ভিত্তিতে এদের ছিনতাইকারী বলা হচ্ছে এবং ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে অবস্থান করছিল— এমন তথ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী এসআই রবিউল ইসলাম বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এ সময় বাংলা ট্রিবিউনের কাছে তিনি দাবি করেন, অন্তর নামে এক ছিনতাইকারীর তথ্যের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর অন্তরকে সামনে রেখে গ্রেফতারকৃত সাব্বির, বাবু, মিনহাজ ও রমজানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে রবিউল ইসলাম বলেন, ‘না, তাদের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। অন্তরের তথ্যের ভিত্তিতেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক হতে পারে, তথ্য যাচাই না করার বিষয়ে রবিউল ইসলাম আরও বলেন, ‘সেই সময়টুকু পাওয়া যায়নি। অন্তরকে আলাদাভাবে দস্যুতার মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।’

এজাহারভুক্ত চার আসামি সাব্বির, বাবু, মিনহাজ ও রমজানকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের কাছ থেকে রড, চাকু উদ্ধারের বিষয়েও কোনও তথ্য দিতে পারেননি এস আই রবিউল ইসলাম।

কীসের ভিত্তিতে তাদের ছিনতাইকারী বলা হচ্ছে—জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্তর নামে একজন ছিনতাইকারীর স্টেটমেন্ট অনুযায়ী তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’ গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আগে কোনও অভিযোগ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে ওসি আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তাদের বিষয়ে আরও কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি।’

পুলিশ এজাহারে কবির হোসেন নামে একজনকে সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করে। তিনি পেশায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ঘটনার বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমার কাছ থেকে শুধু নাম-ঠিকানা নিয়েছে। এছাড়া আমি ঘটনার বিষয়ে আর কিছুই জানি না এবং যারা আসামি তাদেরও চিনি না।’

বাংলা ট্রিবিউনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করেই কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে কখনও কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) ডিউটি শেষে রাত আটটার দিকে অফিস থেকে বের হয়ে তারা বাসায় যায়। রাত আড়াইটায় সাব্বিরের স্ত্রী সাথী ফোন দিয়ে জানান, পুলিশ সাব্বির ও বাবুকে বাসা থেকে নিয়ে গেছে।’