অনলাইন জুয়ায় জড়িত অনেকের নাম পেয়েছে গোয়েন্দারা

সম্প্রতি ইউটিউব চ্যানেল আজাইরা লিমিটেডের প্রত্যয় হিরনসহ তিনজনকে গ্রেফতারের পর অবৈধ অনলাইন জুয়া পরিচালনায় জড়িত আরও বেশ কয়েকজনের নাম পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই বিস্তারিত কিছু বলছেন না তারা। শুধু জানিয়েছেন, এই ধরনের অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। দেশের প্রচলিত আইনে এ ধরনের জুয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। অনলাইন জুয়ার সঙ্গে দেশি-বিদেশি চক্র জড়িত। ভারতীয় এক এজেন্টের প্রলোভনে পা দেয় গ্রেফতারকৃতরা। প্রতি পর্বের জন্য ৭০ হাজার থেকে এক লাখ দশ হাজার টাকা করে পেতো। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইউটিউবের বিভিন্ন কনটেন্টে অনলাইন জুয়ার প্রচারণার অভিযোগে রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করে পুলিশ। পরবর্তীতে তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। গত বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয় ইউটিউবে ‘আজাইরা লিমিটেড’ চ্যানেলের প্রত্যয় হিরন, চ্যানেল হামিদ মালসের হামিদ ও রায়হানকে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেফতারকৃত তিন ইউটিউবার জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে অনলাইন যে জুয়ার বিজ্ঞাপনটি তারা চালিয়ে যাচ্ছিল, সেটি দেশীয় প্ল্যাটফর্মে পরিচালনার বৈধতার বিষয়ে তারা জানতেন না। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসবের পেছনে কারা রয়েছে তাও যাচাই করা হচ্ছে। ভারতীয় একটি এজেন্টের মাধ্যমে তারা এই অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব পায়। প্রথমে হামিদের কাছে ভারতীয় এজেন্টের এই প্রস্তাব আসে। হামিদ বাংলাদেশে মিডিয়ার ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে হামিদের মাধ্যমে প্রত্যয় হিরন এবং তার সহযোগীরা তাদের ইউটিউব চ্যানেল আজাইরা লিমিটেডের বদমাইশ পোলাপান সিজন ফোর এ প্রতিটি পর্বের ফাঁকে ফাঁকে নিজেরা অভিনয় করে অনলাইন জুয়ার বিষয়গুলো দর্শকদের সামনে তুলে ধরতো।

অনলাইনে যেকোনও ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়টি সাইবার বিভাগের মনিটরিংয়ে থাকে। নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে অনলাইন জুয়ার বিষয়গুলো মনিটরিং করা হয়ে থাকে। সেভাবেই আজাইরা লিমিটেড নামে ইউটিউব চ্যানেলের বিষয়ে তদন্ত করে অনলাইন জুয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা জানা যায়। সবচেয়ে বড় বিষয়, এই ইউটিউব চ্যানেলে অনেক সাবসক্রাইবার রয়েছে। এটি জনপ্রিয় একটি চ্যানেল বলা যায়।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক ধরনের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখা যায়। বিভিন্ন স্পিন করে অনেকে টাকা পাচ্ছে এ ধরনের বিষয় দেখতে পাওয়া যায়। শুধুমাত্র আজাইরা লিমিটেড নয় এর আগেও আমরা বেশ কয়েকটি বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছি। অনলাইন জুয়া ছাড়াও অবৈধ চটকদার বিজ্ঞাপনের বিষয়গুলো নজরে রয়েছে। যা একেবারে অবৈধ। এসব অনলাইন কিংবা অফলাইন জুয়া মানুষকে সর্বশান্ত করে দিতে পারে। এসব বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। পরিবারের সদস্যদেরও এসব বিষয় নজর রাখতে হবে, তাদের সন্তানরা অনলাইনে কি করছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ইউনিটের উপ পুলিশ কমিশনার তারেক বিন রাশেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিদেশিচক্র যারা জড়িত রয়েছে, তাদেরকে শনাক্ত করার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তাদের পুরোপুরি শনাক্ত করা গেলে ইন্টারপোলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হবে। অনলাইনে বিভিন্ন তথ্য পরিবেশনের আগে ইউটিউবারদের আরও সতর্ক হয়ে কাজ করারও পরামর্শ দেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই কর্মকর্তা।