ইবির ৫ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কার ও প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের নির্দেশ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী জড়িত ৫ ছাত্রীকে সাময়িক বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি তাদের ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া হল প্রভোস্টকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (১ মার্চ) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতির রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট গাজী মো. মোহসীন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

৫ ছাত্রী হলেন পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, চারুকলা বিভাগ ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মি, আইন বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের ইসরাত জাহান মীম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান।

এ সময় ছাত্ররাজনীতির নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যা গিংয়ের ঘটনায় হাইকোর্ট উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এর আগে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটে জড়িতদের হাইকোর্টে তলব করার নির্দেশনা চাওয়া হয়।

জনস্বার্থে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী মো. মোহসীন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, ইবির ভিসি, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।

পরে রিটটির শুনানি নিয়ে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একজন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন সহকারী শিক্ষকের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি করতে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। তিন দিনের মধ্যে কমিটি গঠন করে পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।

একই সঙ্গে এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের করা কমিটির রিপোর্টও ১০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি নির্যাতনে জড়িত দুই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসের বাইরে রাখতে বলা হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীকে। এ ছাড়া রুল জারি করেন আদালত।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার অনীক আর হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত।

শুনানিকালে আদালত বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের ঘটনা উদ্বেগজনক।

প্রসঙ্গত, সকালে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে রাতভর মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করে ভিডিও ধারণের ঘটনা হাইকোর্টের নজরে আনা হয়। ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী গাজী মো. মহসীন ও আইনজীবী আজগর হোসেন তুহিন। তখন আদালত আইনজীবীদের লিখিত আবেদন নিয়ে আসতে বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে রিট করা হয়।

জানা গেছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের গণরুমে ডেকে নিয়ে ওই ছাত্রীকে নির্যাতন করা হয়।

নির্যাতনকারী ছাত্রলীগ নেত্রীর নাম সানজিদা চৌধুরী অন্তরা। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তার সহযোগী তাবাসসুম ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ভুক্তভোগী ছাত্রীও একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

এ বিষয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন নির্যাতনের শিকার ছাত্রী।