কথা সুর গানে ‘গানের বুলবুল’কে স্মরণ

গাছের ডগায় নতুন পাতা শোভা পাচ্ছে। কাণ্ডে কাণ্ডে বর্ণিল সব ফুলের সমাহার। নারীর সাজ-পোশাকে বাসন্তী রঙ। পুরুষের গহীনে ঢেউ খেলছে মনমাতানো গান। দখিনা হাওয়ায় চারদিকে মৌ মৌ গন্ধ ভাসছে তরঙ্গের তালে তালে। প্রকৃতির এই রূপরস বলে দিচ্ছে এখন ঋতুরাজ বসন্ত চলছে। তাই ফাগুনের উচ্ছ্বাসে মেতেছে সবাই। কিন্তু তারপরও কোনও একজন কিংবদন্তির দেখা মিলছে না কোথাও!

হ্যাঁ, তিনি প্রয়াত আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। দেশের কিংবদন্তি সুরস্রষ্টা হিসেবে সমাদ্রিত তিনি। জনপ্রিয় অনেক বাংলা গানে জড়িয়ে আছে তার নাম। তাই বলে গানের বুলবুলকে ভুলে যায়নি বাঙালি।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সুরস্রষ্টা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে কথামালা আর সুরে সুরে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তার শুভাকাঙ্ক্ষী রফিক আলী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে বিকালে শুরু হয় গানের আসর। দর্শক-শ্রোতাদের ভিড় জমে যায় অনুষ্ঠান শুরুর আগেই।

চলচ্চিত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নানা সময়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া অনেকগুনো গান দিয়ে সাজানো হয় অনুষ্ঠানটি। নবীন শিল্পীদের কণ্ঠে প্রবীণ শিল্পীদের সেইসব গান শোনেন গানপ্রেমিরা। এসময় তাদের মুগ্ধ হয়ে প্রতিটি গানের শেষে করতালি দিতে দেখা যায়। গানের সুরে সুর মেলাতেও দেখা গেছে যুবক-বৃদ্ধা, নারী-পুরুষকে। কোনও কোনও গানের মাঝে ও শেষে গ্যালারির এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে উচ্ছ্বসিত ধ্বনি তোলেন মধ্যবয়সীরা।

গানে মুগ্ধ হতে দেখা যায় ইয়াসমিন মুনু নামে মধ্য বয়সী এক নারীকে। এই নারীকে প্রেমের গানে আপ্লুত আবার বিরহের গানে ফ্যাকাসে হতে দেখা যায়। তিনি বলছিলেন, প্রয়াত বুলবুল স্যারের প্রতিটি গান কথা, সুর, তাল, লয়ে স্বতন্ত্র। এজন্য প্রতিটি বাঁকে তড়িৎ চুম্বকের মতো টানে। এমন গান জাতি শত বছরেও ভুলবে না।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াতক আলী লাকী, ইমতিয়াজ বুলবুলের ছেলে সামির ইমতিয়াজ, মুক্তিযোদ্ধা বিচ্ছু জালাল, মুক্তিযোদ্ধা এহেছানুল হক মিনু, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার। ছেলে সামির ইমতিয়াজ  সুরস্রষ্টা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের জন্য দোয়া চান। স্মৃতিচারণ করেন অন্যরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কণ্ঠশিল্পী রাজিয়া মুন্নী।

এদিকে, ‘তৃতীয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব’-এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান হয়েছে শিল্পকলা একাডেমিতে। সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১৫ দিনব্যাপী চলা এ আয়োজনের পর্দা নামে। এতে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে.এম. খালিদ, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিক্ষক মসিহ্উদ্দিন শাকের বক্তব্য রাখেন।

শিল্পকলা একাডেমির ৬৪টি জেলা শাখার ব্যবস্থাপনায় দেশ ব্যাপী একযোগে চলেছে ‘তৃতীয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব'। উৎসবে প্রদর্শিত ৩৬ চলচ্চিত্রের মধ্যে ৭ ক্যাটাগরিতে ৭ জনকে পুরষ্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে সব চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নিয়ে ছিল বিশেষ প্রীতি সম্মেলনি। দিনব্যাপী চলা এ সমাপনী আয়োজনে বিকালে প্রদর্শিত হয় চলচ্চিত্র— ‘মুজিব আমার পিতা’ এবং ‘নোনা জলের কাব্য’।

এর আগে সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে একাডেমি আয়োজিত ‘বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্স ২০২৩’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। শাস্ত্রীয় সংগীত, লোকসংগীত,সেতার, বেহালা, শাস্ত্রীয় নৃত্য (ভরত নাট্যম, ওড়িষী, গৌড়ীয়), সরোদ, পিয়ানো, বাদন ও স্টাফ নোটেশন, বাঁশি, গিটার, তবলাসহ ১৮টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হতে যাচ্ছে।

এর বাইরে ‘ক’ বিভাগে প্রথম থেকে পঞ্চম এবং ‘খ’ বিভাগে যষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত রয়েছে শিশুদের জন্য সাধারণ সংগীত প্রশিক্ষণ কর্মশালা। এছাড়া চারুকলা বিষয়ে ৪ থেকে ৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য শুরু হচ্ছে ১ বছর মেয়াদী ফাউন্ডেশন কোর্স এবং ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের জন্য শুরু হচ্ছে ৩ বছর মেয়াদী বেসিক কোর্স। শিল্প সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের মাধ্যমে সংস্কৃতির আলো সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর জাঁকজমক আয়োজনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা। শুরুতে শাস্ত্রীয় নৃত্য, শাস্ত্রীয় সংগীত, সেতার ও সরোদের মোট ৪টি বিষয়ে বছরব্যাপী এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হলেও ৮ বছরে তা ১৮টি বিষয়ে বর্ধিত হয়েছে।

সকালে প্রথম পর্বে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় উদ্বোধন অনুষ্ঠান। পরে তথ্যচিত্র প্রদর্শনী দেখানো হয়। প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সচিব মো. আবুল মনসুর, সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এই প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে সংস্কৃতি চর্চা সাধারণের মধ্যে আরও ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন একাডেমির মহাপরিচালক। দ্বিতীয় পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালায় পরিবেশিত হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে মনোজ্ঞ যন্ত্রসংগীত পরিবেশনা, দলীয় নৃত্য ও দলীয় সংগীত।   

এদিন সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে হৃৎমঞ্চের নাটক ‘রিমান্ড' দর্শকদের সামনে আনা হয়। নাটকটি দেখতে দর্শকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। আর জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে চলছে ‘আন্তরিক কুষ্টিয়া’র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতেও ওই অঞ্চলের নানা আয়োজন উপভোগ করতে দেখা যায় নগরবাসীকে।

এ ছাড়া জাতীয় চিত্রশালা গ্যালারিতে (গ্যালারি নম্বর ৬) সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা সোসাইটি অব ফাইন আর্টসের প্রদর্শনী এবং জাতীয় চিত্রশালা গ্যালারিতে (গ্যালারি নম্বর ৭) সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এম এম ফাউন্ডেশনের প্রদর্শনী ছিল। প্রদর্শনী দুটিতে নবীন-প্রবীণ শিল্পীদের মিলন মেলা বসে শিল্পের সঙ্গে।