রাজধানীতে বিভিন্ন ভবনের স্যুয়ারেজ ও গ্যাস ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখা হবে

রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এবং সিদ্দিকবাজারে দুদিনের ব্যবধানে বিস্ফোরণের ঘটনায় নড়ে-চড়ে বসেছে সরকারি বিভিন্ন সেবা সংস্থা। তারা বলছেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা নতুন কিংবা পুরাতন ভবনগুলোতে স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা কী অবস্থায় রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হবে। এছাড়া গ্যাস সঞ্চালন লাইনগুলোও তদারকির আওতায় আনা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ হিসেবে এ ধরনের কার্যক্রম পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশনকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জানানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অনেক পুরনো ভবন রয়েছে। একই সাথে অনেক নতুন ভবন গড়ে উঠছে। এ ধরনের বিস্ফোরণের ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্য পুরনো এবং নতুন ভবনগুলোর স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা এবং গ্যাস ব্যবস্থাপনা কী অবস্থায় রয়েছে তার সবশেষ তথ্য খোঁজা হবে। সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে একটি কর্মশালার মাধ্যমে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার কথাও বলেন তিনি।

তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ বলছে, সিদ্দিকবাজারে যে বিস্ফোরণ ঘটেছে তা গ্যাস লিকেজ থেকে হয়নি। তবে ওই ভবনের নিচে একটি গ্যাস রাইজার পাওয়া গেছে বলে জানান কর্মকর্তারা। ঘটনাটি প্রাকৃতিক গ্যাসের কারণেই ঘটেছে কি না তা তদন্তসাপেক্ষে বলা যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রান্নার মিথেন গ্যাস বাতাসের অক্সিজেনের সাথে মিশে বিস্ফোরকের মতো আচরণ করতে পারে। বদ্ধঘর হলে বিস্ফোরণের মাত্রা অনেক বেশি হয়। সিদ্দিকবাজারের বিস্ফোরণটি খোলা জায়গায় ঘটেনি, ভবনের বেজমেন্টে ঘটেছে। বেজমেন্টকে বদ্ধঘর হিসেবেই ধরে নেওয়া যায়। দুর্ঘটনার উৎপত্তিস্থল ভবনের বেজমেন্ট—এটা আমরা তদন্তের মাধ্যমে বুঝতে পারছি। বিস্ফোরণের হিল ইফেক্ট ভেতর থেকে উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ছাদ ভালো করলে খেয়াল করলে দেখা যায় সেটি উপরের দিকে বেঁকে গেছে। নিচ থেকে বিস্ফোরণের ধাক্কাটা উপরের দিকে গেছে বলেই এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিভিন্ন সংস্থার সাথে সমন্বয় করে সিটি করপোরেশনকে কাজ করতে হয়। এরই মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর তালিকা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ভবনের স্যুয়ারেজ এবং গ্যাস ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেখভালের পাশাপাশি সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে সিটি করপোরেশন।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, জমে থাকা গ্যাসের কারণেই সম্প্রতি রাজধানীর দুই জায়গায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। বাসা-বাড়িতে জমে থাকা গ্যাসের বিষয়ে জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে। বিভিন্ন ভবনে কক্ষগুলোকে আবদ্ধ না রেখে দরজা-জানালা খুলে আলো-বাতাস ঢোকার সুযোগ করে দিতে হবে—যাতে করে বিস্ফোরণ সৃষ্টি হয় এমন কোনও গ্যাস জমতে না পারে।