মেডিক্যালের প্রশ্নের নামে প্রতারণা করে হোটেল-ফ্ল্যাটের মালিক

দেশের সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আজ শুক্রবার (১০ মার্চ) অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তা পরীক্ষার আগে সরবরাহ করার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে এস এম আনিস নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ লালবাগ গোয়েন্দা বিভাগ। 

রাজধানীর মনিপুরীপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) তাকে গ্রেফতার করা হয়। গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, প্রশ্ন ফাঁস করার সক্ষমতা তার নেই। মূলত প্রশ্নফাঁসের প্রলোভন দেখিয়ে সে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতো। মূলত সে একজন দালাল।

শুক্রবার (১০ মার্চ) রাজধানীর মিন্টো রোডে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন আর রশিদ।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আনিসের কাছ থেকে চলতি বছরের পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড, আগের বছরে অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের শতাধিক চেক, পুলিশ কনস্টেবল পদপ্রার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড, বিভিন্ন লিখিত ও অলিখিত নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প, একাধিক প্যাড, পাঁচটি ডিজিটাল এবং সনাতন স্ট্যাম্প-সিল এবং একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে হারুন অর রশিদ বলেন, ‘গ্রেফতারকৃত আনিস এসএসসি পাস করে কিছু দিন পিপলস জুটমিলে কাজ করে। পরে বিভিন্ন কাপড়ের ফ্যাক্টরিতে ডাইংয়ের কাজ করেছে। ২০১০ সাল থেকে সে ফার্মগেট এবং গ্রিন রোডে ছাত্রছাত্রীদের হোস্টেলে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি ফরম কেনাবেচা শুরু করে। এখান থেকেই পরিচিত হয় নিজ এডুকেশন নামক কনসালটেন্সি ফার্মের স্বত্বাধিকারী জাহিদের সঙ্গে। তারপর থেকে অর্ধশিক্ষিত আনিসও নিজস্ব কনসালটেন্সি ফার্ম ‘ফ্রেন্ডস অ্যাডমিশন কনসালটেন্ট’ খুলে বসে। আর এজন্য সে সিটি করপোরেশন থেকে মুদি দোকান চালানোর মতো ৭ হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে ব্যবসার লাইসেন্সও নেয়। সেই লাইসেন্সেই সে দেশের এবং সার্কভুক্ত বিদেশি শিক্ষার্থীদের মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির বাণিজ্য শুরু করে।

প্রতারক-01

এই কাজের জন্য সে নিজের প্যাডে বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষদের সিট সংরক্ষণের জন্য চিঠি লিখতো বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের লোকদের এবং মন্ত্রণালয়ের দু-একজন অসাধু ও রিটায়ার্ড কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে প্রশ্নফাঁসের নামে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের প্রতারণা করে আসছিল। 

হারুন অর রশিদ বলেন, ‘মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ছাড়াও বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় দালালি অথবা প্রতারণা বাণিজ্য করে এসএম আনিস ইতোমধ্যে দুটি হোটেল এবং মনিপুরীপাড়ায় একটা বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছে। চলমান এমবিবিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সক্ষমতা তার ছিল না। কিন্তু এই পরীক্ষার নামে বিস্তর প্রতারণার জাল সে বিভিন্ন মাধ্যমে বিস্তার করেছে।’ 

এস এম আনিসের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা হয়েছে। তার সঙ্গে আর কারা জড়িত ছিল, সে ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।