এবারের হজ প্যাকেজ অমানবিক: হাইকোর্ট

চলতি মৌসুমের হজ প্যাকেজকে অমানবিক বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। হজের খরচ কমানোর নির্দেশনা চাওয়া রিটের শুনানিকালে মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট গাজী মো. মহসীন, অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ জামান খান, অ্যাডভোকেট আহসান উল্লাহ প্রমুখ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ।

শুনানিতে আদালত বলেন, ‘এবার হজে এত খরচ ধরা হয়েছে–সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, আমরা নিজেরা খরচের প্যাকেজ দেখে ভয় পেয়ে গেছি।’

ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অথর্ব মন্ত্রণালয় উল্লেখ করে আদালত বলেন, ‘এত টাকা খরচ নির্ধারণের ফলে যারা উপযুক্ত তারা হজে যেতে পারছেন না। এটা একটা অমানবিক হজ প্যাকেজ। এটি তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত তারা গুনাহর ভাগী হবেন।

বিমান ভাড়া প্রসঙ্গে আদালত বলেন, ‘বিমান কোটি কোটি টাকা লোকসানের দায় হজযাত্রীদের ওপর চাপাতে পারে না। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় হজ ফান্ড আছে। বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার ফান্ড কম। একমাত্র বঙ্গবন্ধু এ বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন। তারপরে এ বিষয়ে কেউ চিন্তা করেনি।’

সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বাইরে অন্য যেকোনও এয়ারলাইন্সের টিকিট ক্রয়ের সুবিধা না থাকার বিষয়ে আদালত বলেন, ‘এখানে ব্যবসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

পরে চলতি মৌসুমে হজের প্যাকেজ কীভাবে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করা হলো এবং হজ প্যাকেজের বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ অবস্থান কী, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদকে এ তথ্য জানাতে বলেছেন আদালত।

পাশাপাশি বুধবার (১৫ মার্চ) রিটের পরবর্তী শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে, গত ৬ মার্চ চলতি বছরের হজের প্যাকেজ মূল্য সংশোধন করে ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করতে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয় সচিবকে এ নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আল কোরআন স্টাডি সেন্টারের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ জামান।

তবে সে নোটিশের জবাব না পেয়ে চলতি মৌসুমে হজের প্যাকেজের মূল্য কমিয়ে পুনরায় প্যাকেজ ঘোষণা করতে রিট দায়ের করা হয়। রবিবার (১২ মার্চ) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ জামান জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতি বছরে হজের খরচ ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। অন্যদিকে কোরবানি ছাড়াই এবার বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের জন্য সর্বনিম্ন খরচ নির্ধারণ করা হয় ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা। আগের বছর এটি ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা ছিল। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে দেড় লাখ টাকা বেড়েছে।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে গত ৯ জানুয়ারি সৌদি সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী এ বছর হজযাত্রীর কোটা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন নির্ধারিত হয়েছে। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন পবিত্র হজ পালন করতে পারবেন।

এ বছর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সৌদি আরবে গমনকারী শতভাগ হজযাত্রীর প্রি-অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ‘মক্কা রোড চুক্তি’ অনুযায়ী বিমানবন্দরেই অনুষ্ঠিত হবে।