মেট্রোপলিটন পুলিশের একক আইন: পর্যালোচনাতেই তিন বছর

ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিদ্যমান আইনের সংশোধন কবে চূড়ান্ত হবে—জানে না কেউ। এই আইনি বিষয়গুলো কোন পর্যায়ে আছে, সেটাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতরসহ সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তাই অবহিত নন। ২০২০ সালের নভেম্বরে তিন মেট্রোপলিটন পুলিশের আইন পর্যালোচনা ও সব মেট্রোপলিটন পুলিশের জন্য একটি একক আইন পর্যালোচনার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হলেও অদ্যাবধি সেখান থেকে কোনও মতামত পাওয়া যায়নি। এরপর ২০২২ সালে মহানগর পুলিশ আইনের খসড়া পুনরায় যাচাইয়ের লক্ষ্যে ছয় সদস্যের একটি সাব-কমিটিও করা হয়েছিল। কিন্তু এরপরও আলোচ্য বিষয়ের কোনও অগ্রগতি নেই।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৭৮ এবং খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স ১৯৮৫ নামের আইন তিনটি বাংলায় রূপান্তরসহ সব মেট্রোপলিটন পুলিশের জন্য একটি একক মেট্রোপলিটন আইনের খসড়া সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল একযুগেরও বেশি সময় আগে। এ বিষয়ে মতামত চেয়ে ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর  স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং আইন ও বিচার বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়। আইন ও বিচার বিভাগের মতামত পাওয়া গেলেও স্থানীয় সরকার বিভাগের মতামত পাওয়া যায়নি এখনও। একাধিকবার এ বিষয়ে চিঠি দিয়েও এ বিভাগের কাছ থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। এরমধ্যে মহানগর পুলিশ আইন, ২০২২-এর খসড়া পুনরায় যাচাইয়ের লক্ষ্যে জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে ৬ সদস্যের একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অপরদিকে, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অর্ডিন্যান্স ১৯৭৯ যুগোপযোগী করা হচ্ছে। এটি বাংলায় প্রণয়ন করে ‘আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন আইন ২০২২’ নামে খসড়া তৈরি করা হয়েছে। মতামতের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর পর গত বছরের (২০২২) সেপ্টেম্বরে সেখান থেকে কিছু সিদ্ধান্ত ও মতামত দেওয়া হয়। যা পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ওয়েলফেয়ার ফান্ড অর্ডিন্যান্স ১৯৮৬ (নন-গেজেটেড এমপ্লয়িজ) আইনটির খসড়ার ওপর লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং গ্রহণ করা হয়েছে। খসড়া বিলটির বিষয়ে মতামত দিতে অর্থবিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুলিশের আরও কিছু আইন যুগোপযোগী করার কাজ চলছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

পুলিশের যেসব আইন যুগোপযোগী ও সংশোধন করার কার্যক্রম চলছে, সেগুলো কোন পর্যায়ে আছে— জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের আইন শাখার জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার আইন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইন সংশোধনের বিষয়গুলো তিনি দেখেন না। এগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা থেকে তদারকি করা হয়।’

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আইন শাখার অতিরিক্ত সচিব এস. এম. রেজাউল মোস্তফা কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বিষয়টি কোন পর্যায়ে আছে, সে সম্পর্কে তার বিস্তারিত ধারণা নেই। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি জেনে জানাতে হবে।’ এ বিষয় ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘ভালো কথা মনে করেছেন। এটা কোন পর্যায়ে আছে তা জানতে হবে।’

মেট্রোপলিটন পুলিশের আইন নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পাওয়া গেলেও স্থানীয় সরকার বিভাগ এখনও কোনও মতামত দেয়নি। এ বিষয়ে মতামত দিতে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ড. মলয় চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আইনি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করতে হয়। এজন্য একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছে। ওই কমিটি পর্যালোচনা শেষে আইন শাখায় পাঠাবে। এটা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা যায় খুব শিগগিরই সেখান থেকে সচিবের দফতর হয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের মতামত যাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।’