ফেসবুকে প্রেম, দেখা করতে গিয়ে খুইয়েছেন সর্বস্ব

ফেসবুকে ‘হৃদিতা রহমান’ নামে ফেক আইডি ব্যবহার করে পাঠাতো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। গ্রহণ করার পর শুরু হতো আলাপ। তারপর দেখা করার জন্য তাড়া। ডেকে নিয়ে আটকে রেখে লুট করতো সর্বস্ব।

সম্প্রতি একটি বেসকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী এক তরুণের সঙ্গে ঘটেছে এমন ঘটনা। অনলাইনে পাঁচ দিনের পরিচয়ে ওয়ারীতে দেখা করতে এসে সর্বস্ব হারিয়েছেন তিনি।

ভুক্তভোগী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কয়েক দিন আগে ‘হৃদিতা রহমান’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে রিকোয়েস্ট আসে। পরে আমি গ্রহণ করার পর মেসেজ দিতে থাকে। আমিও কথা বলি। আস্তে আস্তে পরিচয় হয়। দুদিন পরেই দেখা করার জন্য বলে। আমি প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও পরে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিই। ওয়ারী সেন্ট্রাল ওমেন্স কলেজের সামনে আসতে বলে। গত ১৪ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় কলেজের সামনে যাই।

তিনি আরও বলেন, সেখানে পৌঁছালে ‘হৃদিতার’ কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আদনান ও জিসান নামে দুজন আমাকে আরকে মিশন সড়কের একটি লেপতোষকের কারখানায় নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল তামিম। পরে আমাকে আটকে আমার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন, দামি ঘড়ি ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় তারা এবং মুক্তিপণের জন্য চায় দেয়।

তিনি বলেন, এ সময় আমি আমার বন্ধু জাহিদকে ফোন করে টাকা পাঠাতে বলি। পরে তারা কাউকে যেন কিছু না বলার কথা বলে পালিয়ে যায়। কিন্তু আমার এমন টাকা চাওয়ার কথা শুনে জাহিদ ওয়ারী থানা পুলিশের সহায়তা চায়। সংবাদ পেয়ে ওয়ারী থানার পুলিশ আমাকে উদ্ধার করে।

ডিএমপি ওয়ারী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) রেফাতুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আদনান সামি মজুমদার নামে এই তরুণ দীর্ঘদিন বিভিন্ন জনের সঙ্গে এভাবে প্রতারণা করে আসছিল। ইউনুস তার বন্ধু জাহিদকে ফোন করে টাকা পাঠাতে বলে। এতে ইউনুস প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে জাহিদ বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানান। অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিযান চালিয়ে প্রতারণা চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে ওয়ারী থানা পুলিশ।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, হৃদিতা রহমান নামে কোনও তরুণীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। প্রতারণা চক্রের প্রধান আদনান নিজেই ভুয়া পরিচয়ে আইডি ব্যবহার করত। পরে টার্গেট করে বিভিন্নজনকে রিকোয়েস্ট পাঠাতো। গ্রহণ করলেই শুরু হতো কথাবার্তা। একপর্যায় প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে দেখা করার কথা বলে ডেকে নিয়ে ভুক্তভোগীর সর্বস্ব লুটে পালাত। তবে আদনান ওয়ারি এলাকার বাইরে যেত না। সবাইকে এই এলাকায় সবাইকে ডেকে আনতো।

এসি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, আদনান এর আগে ১২ থেকে ১৪টি ঘটনা ঘটিয়েছে। তার প্রতারণার কাজে স্থানীয় বেশ কয়েকজন যুবক সহযোগিতা করে। এর মধ্যে জিসান মাহমুদ ও তামিম হাওলাদার নামে তার দুই সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। আর বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এই চক্রকে আইনের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা চলছে।