নওগাঁয় নারীর মৃত্যুর ঘটনায় র‌্যাবের তদন্ত কমিটি

নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র‍্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিন (৪৫) নামে নারীর মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করছে সংস্থাটি। এরইমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে র‍্যাব। তদন্তে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এ ঘটনায় র‌্যাব সদস্য কারও দায়িত্বে অবহেলা ছিল কিনা জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত যুগ্ম সচিব এনামুল হকের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে, ফেক আইডি ব্যবহারে তার নামে কেউ চাকরি দেওয়া ও বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রতারণা করে আসছিল। এ ঘটনায় এনামুল হক ২০২২ সালের মার্চে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে প্রতারণার অভিযোগে আদালতে মামলাও করেন তিনি। গত ১৯ ও ২০ মার্চ নিজ কার্যালয়ের সামনে তার নাম ব্যবহার করে চক্রটি প্রতারণা করে—এই খবর পেয়ে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, প্রতারণায় আল আমিন নামে একজনের যোগসাজশ রয়েছে। এরপর তিনি জেসমিন নামে এক নারীর নাম জানতে পারেন।

এনামুল হক অফিস যাওয়ার পথে র‌্যাবের টহল টিমকে অভিযোগ করেন। তার সামনেই অভিযুক্ত নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদকালে র‍্যাবের নারী সদস্যরা ছিলেন। সাক্ষী ছিলেন, অভিযোগকারী এনামুল হকও ছিলেন।

সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদকালে জেসমিন সব অভিযোগ স্বীকার করেন। তার মোবাইলে চলমান অবস্থায় এনামুল হকের নামে খোলা ফেক ফেসবুক আইডি দেখা যায়। তার মোবাইলে সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের তথ্য পাই আমরা। যেখানে লাখ লাখ টাকা জমার তথ্য পাওয়া গেছে।

জব্দ আলামত নিয়ে একটি কম্পিউটারের দোকানে প্রিন্ট করা হয়। এরপর সেখান থেকে থানায় মামলার উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে ওই নারী অসুস্থবোধ করেন। তখন মামলার চেয়ে ওই নারীকে হাসপাতালে নেওয়াকেই বেশি গুরুত্ব দেয় র‌্যাব।

কমান্ডার মঈন বলেন, র‌্যাব শুধু না, প্রত্যেকটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নারী ও শিশু অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সিরিয়াস। আমরা ওই নারীকে নওগাঁ হাসপাতালে নিয়ে যাই। তিনি গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে হাসপাতালে ঢোকেন। এসময় তার আত্মীয়-স্বজন ও তার কর্মস্থল ভূমি অফিসের সহকর্মীদের খবর দেওয়া হয়।

সন্ধ্যার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্ট্রোক সন্দেহে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে সিটি স্ক্যানে স্ট্রোকের আলামত আসে। তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ওই নারী।

কমান্ডার মঈন বলেন, ওই নারী কী কারণে মৃত্যুবরণ করেছেন তা কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেছেন, ডেথ সার্টিফিকেটে বিষয়টি উঠে এসেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে পারমিশন লাগে। ভুক্তভোগী যুগ্ম সচিব এনামুল হক অনুমতি সাপেক্ষে পরবর্তীতে থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, জেসমিন নামে ওই নারী র‌্যাব হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। র‌্যাব সদর দফতরে আমাদের ইনকুয়ারি সেল রয়েছে। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্তে দেখা হচ্ছে কারও কোনও ধরনের অবহেলা, গাফিলতি বা যোগসাজশ কিংবা অনৈতিক কিছু ছিল কিনা! তদন্তে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে অতীতের মতো চাকরিচ্যুতিসহ কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কারও অবহেলা বা গাফিলতি র‌্যাব পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, এটা এখনই বলার মতো সময় আসেনি। মেডিক্যাল রিপোর্টে সব স্পষ্ট (ক্লিয়ার)। তদন্ত করা হচ্ছে। কমিটি তদন্তে যদি কারও কোনও গাফিলতি পায় তাহলে অবশ্যই আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

আরও পড়ুন: