প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাংসের দাম ও মান নিয়ে প্রশ্ন

ফ্রিজিং ভ্যানে করে বিক্রি করা প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাংসের দাম ও মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, বাজারমূল্যের চেয়ে সামান্য কমে দিলেও এসব পণ্যের মান ভালো নয়। এমন অভিযোগ করেন তেজকুনি পাড়ার বাসিন্দা সাহেনা বেগম (৫০)।

তিনি বলেন, রমজানের প্রথম দিনে এসে এক কেজি গরুর মাংস নিয়েছিলাম। মাংসটা খেয়ে তেমন ভালো লাগেনি। বাজারের মাংসের মতো মনে হয়নি। তা ছাড়া অতিরিক্ত চর্বি ও একসঙ্গে সবকিছু মেশানো। তাই মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) আর গরুর মাংস নিইনি। শুধু ডিম আর দুধ নিয়েছি। সাহেনা বাজার করতে সঙ্গে নিয়ে যান বড় বোন রোশনা বেগমকে (৬০)। তিনিও মাংসের স্বাদ ও মান নিয়ে একই অভিযোগ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মচারী বলেন, বিক্রির শুরুর দিন মাংস, দুধ ও ডিম তিনটাই নিয়েছি। তবে মাংসটা ভালো মনে হয়নি। মাংস ভালো পড়েনি। ১০০ টাকা বেশি দিলেও বাজারে যে মাংস পাওয়া যায়, ওইটাই ভালো। তাই আজ মাংস ছাড়া অন্য সব নিয়েছেন।

পশ্চিম নাখালপাড়ার বাসিন্দা জুলেখা খাতুনও (২৮) যান রাজধানীর নাখালপাড়া এলাকায় লুকাস মোড়ের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভ্রাম্যমাণ ফ্রিজিং ভ্যান থেকে বাজার করতে। তিনি বলেন, বাজারে না গিয়ে এখানে আসছি কিছু টাকা বাঁচানোর জন্য। সরকার যেহেতু এমন উদ্যোগ নিয়েছে, তাহলে সেটা আরও ভালো করে করুক। পণ্যগুলোর দাম আরও কমিয়ে নিয়ে আসুক। মাংসের মানও যেন ভালো থাকে সেদিকটা খেয়াল রাখুক। তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়। মুরগির দাম দোকানে ২৪০ টাকা কেজি। আর এখানে দেখছি ড্রেসিং করা হাফ কেজির দাম নিচ্ছে ১৭০ টাকা। তাহলে দামটা তো কম রাখছে না।

ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম প্রথম দিন থেকেই নিয়মিত বাজার করে আসছেন প্রাণিসম্পদের ওই ভ্রাম্যমাণ ভ্যান থেকে। মঙ্গলবার কিনেছেন ডিম আর দুধ। তার মতে, এলাকার জনগণ অনুযায়ী ভ্যানে যে পরিমাণ নিত্যপণ্য দেখতে পান সেটি পর্যাপ্ত নয়।

পরিমাণ আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমার যখন যেটি দরকার সেটিই নিচ্ছি, একসঙ্গে নিচ্ছি না। এ এলাকায় শত শত পরিবারের বসবাস। তারা এখানে খাসির মাংস এনেছে মাত্র তিন কেজি। তিন কেজি মাংস কাকে দেবে। আমার এক প্রতিবেশী প্রথম বিষয়টি জানান। আমিও আরেক প্রতিবেশীকে বলেছি, এখানে এসে বাজার করতে। এভাবে তো জানাজানি হচ্ছে। সবাই একসঙ্গে এলে সামলাবে কীভাবে। মাংসের মান যেমন বাড়ানো দরকার, তেমনি পণ্যের মূল্যও কমানো উচিত। তবেই এ উদ্যোগ সফল হবে বলে মনে করেন তিনি।

যেখানে পণ্যের পরিমাণ বাড়ার কথা সেখানে আজ আরও কম পণ্য নিয়ে বসেছেন। এর কারণ কী? জানতে চাইলে লুকাস মোড়ের ভ্যানের ক্যাশিয়ার মো. তাওহীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২৬ মার্চের দিন থেকে কম বিক্রি হচ্ছে। এ জন্য হয়তো চাহিদা অনুযায়ী পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। আমাদেরকে যেটুকু বুঝিয়ে দেয়, সেটুকুই নিয়ে আসি। বয়লার মুরগির দাম কমেছে, কিন্তু এখানে আগের নির্ধারিত মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে। কারণ, নতুন দাম নির্ধারণের কোনও নির্দেশনা আমাদের কাছে এখনও আসেনি। আসলে আমরা সে দামে বিক্রি করবো।

এ প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের বাজার মনিটরিং অফিসার রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মোহাম্মদপুরে সাদেক এগ্রোতে রাতেই গরু কাটা হয়। পরে মাংস প্রসেসিং করে বাজারে নিয়ে আসা হয়। সেখানে ডাক্তার নিয়োজিত রয়েছেন। তারা মাংস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই বাজারে ছাড়ার অনুমতি দেন। মাংস প্রতিদিন তো একরকম হয় না। একসঙ্গে অনেক মাংস প্রসেসিংয়ের জন্য কিছু ঘাটতি থাকতে পারে। এ ছাড়া পণ্যের গুণগত মান ঠিক রেখে, এর মূল্য সহনীয় পর্যায়ে যেন নেওয়া যায়, সে চেষ্টা আমাদের অব্যাহত রয়েছে।

জনসাধারণের পুষ্টি চাহিদা পূরণে প্রথম রমজান থেকে ‘সুলভ’ মূল্যে ডিম, দুধ ও মাংস বিক্রি করছে সরকার। মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর ২০টি স্থানে এসব নিত্যপণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২৪ মার্চ সকাল থেকে এসব পণ্যের বিক্রি শুরু হয়। ২৮ রমজান পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে।

এই পদ্ধতিতে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৪০ টাকা, খাসি প্রতি কেজি ৯৪০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার মুরগি ৩৪০ টাকা, তরল দুধ প্রতি লিটার ৮০ টাকা এবং ডিম প্রতিটি ১০ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে।