প্রথম আলোর সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলায় আসকের উদ্বেগ

প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। অবিলম্বে এ মামলা প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানায় তারা।

বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানায় সংস্থাটি।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের বিবৃতিতে বলা হয়, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর রমনা থানায় মামলা করা হয়েছে। একই মামলায় প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকেও আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আসামিদের মধ্যে সহযোগী ক্যামেরাম্যানসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরাও রয়েছেন। এ ঘটনায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ ধরণের মামলা দায়ের হয়রানিমূলক। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং বিদ্যমান মানবাধিকারের মূলনীতির চরম পরিপন্থি।

আসক মনে করে, প্রথম আলোর প্রতিবেদককে ভোররাতে বিনা পরোয়ানায় তুলে নিয়ে আটক রাখার মতো অপতৎপরতা এ ধরণের হয়রানিমূলক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করছে। আইনমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চপদস্থ নেতারা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা গ্রহণের আগে বিশেষ সতর্কতা বজায় রাখার যে অঙ্গীকার করেছিলেন, তার প্রতিফলন এ ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না। বরং উচ্চপদস্থ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের প্রথম আলো ও প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে নানান মন্তব্য এ ধরণের মামলা দায়ের করতে অতিউৎসাহীদের অনুপ্রাণিত করছে বলে মনে হচ্ছে।

আসক বলেছে, গত ২৬ মার্চ দৈনিক প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদকে কেন্দ্র করে ২৯ মার্চ বুধবার মধ্যরাতে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ সংবাদ সংক্রান্ত পোস্টটি সংশোধন করলেও এই খবরটিকে 'মিথ্যা' ও 'রাষ্ট্রবিরোধী' উল্লেখ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের কথা জানান আইনজীবী আবদুল মালেক (মশিউর মালেক)। যিনি নিজেকে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। একই সাথে তিনি 'বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন' নামে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বলেও দাবি করেছেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ এর (২), ৩১, ৩৫ ধারায় আনা অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যবহার করে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণ করে এবং বিভ্রান্তি ছড়াতে মিথ্যা তথ্য প্রচার করেছে।

আরও জানা গেছে, মামলায় প্রথম আলোর সম্পাদক ছাড়াও পত্রিকাটির সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামান, সহযোগী একজন ক্যামেরাপারসন এবং প্রতিবেদনটি প্রচার-প্রকাশের সাথে জড়িত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। একই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে বাসা থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় পর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে আদালতে আনা হয়। তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তুলে নেওয়ার ২০ ঘণ্টা পর।

এ পরিস্থিতিতে এটি স্পষ্ট যে, হয়রানি করার জন্য এ ধরণের মামলা দায়ের করা হচ্ছে। যার প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। এমন পদক্ষেপ প্রকৃতপক্ষে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত করবে। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করবে।

সর্বোপরি এর মাধ্যমে একটি সভ্য, আইন ও মানবাধিকারভিত্তিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এ মামলা অনতিবিলম্বে তুলে নেওয়া, আটক সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া, এ আইনের আওতায় মামলা গ্রহণে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার জোর দাবি জানাচ্ছে আসক।