চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি

উৎসবপ্রিয় বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা বর্ষবরণ। প্রতিবছর বাংলা বছরের প্রথম দিনটিকে বরণ করে নিতে বাঙালিরা মুখিয়ে থাকে। আর এর প্রধান অনুষঙ্গ হলো মঙ্গল শোভাযাত্রা। বছরের প্রথম দিনের প্রথম সকালে সারা বছরের মঙ্গল কামনায় মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৪৩০ বঙ্গাব্দের প্রস্তুতি। প্রতিবারের মতো এবারও প্রায় ১৫ দিন আগে শুরু হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন।

প্রতিবছর শোভাযাত্রার আয়োজনের দায়িত্বে থাকে চারুকলা অনুষদের দুটি ব্যাচ। এ বছর দায়িত্বে আছে অনুষদের ২৪ ও ২৫তম ব্যাচ। এই আয়োজনের জন্য কোনও স্পনসর গ্রহণ করে না কর্তৃপক্ষ। অনুষদের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কর্মশালায় আঁকা ছবি ও বিভিন্ন শিল্পকর্ম বিক্রি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে আর্থিক অনুদানের আয়োজন করা হয় এই মঙ্গল শোভাযাত্রায়।

শনিবার (১ এপ্রিল) বিকালে চারুকলা অনুষদে সরেজমিনে দেখা যায়, ছবি আঁকা, শিল্পকর্ম তৈরিতে ব্যস্ত আয়োজকরা। তার পাশেই চলছে মঙ্গল শোভাযাত্রায় প্রদর্শনীর জন্য বিভিন্ন মুখোশ, পেঁচা, ঘোড়া, মূর্তি, ট্যাপা পুতুল, নকশি পাখি, বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি।

চারুকলার শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিদিন নিজেদের ক্লাস, পরীক্ষার ফাঁকে দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই প্রদর্শনী ও আঁকার কাজ। বাঙালির ইতিহাস স্বীকৃত এই ঐতিহাসিক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে আনন্দিত তারা। নিজেদের কাজ মনে করেই এসব কাজ করেন বলে জানান তারা।

ড্রয়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী অরিজিৎ বলেন, বাঙালি অন্যতম একটি উৎসব এই বাঙলা বর্ষবরণ। এটি ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব বাঙালির প্রাণের উৎসব। আর উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। ইতোমধ্যে এটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে সত্যি আনন্দিত। শুধু আমিই না, এখানে যারা আছে, সবার কাছেই গর্বের। সবাই এটাকে নিজের কাজ মনে করি।

গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, চারুকলা বিভাগ এই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে থাকে। এবার আমরা ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থীরা এই দায়িত্বে রয়েছি। এই আয়োজনের জন্য আমরা কারও কাছ থেকে টাকাপয়সা নিই না। বিভাগের সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ছবি আঁকি, মুখোশসহ বিভিন্ন পোর্ট্রেট তৈরি করি। এগুলো বিক্রি করে সেই আয় দিয়েই শোভাযাত্রার আয়োজন করি। এখানে আমাদের প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। কাজটি আমরা উপভোগ করি।

তিন উপকমিটি
শোভাযাত্রা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে গঠন করা হয়েছে তিনটি উপকমিটি। গত ২৯ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের পয়লা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সভায় এই কমিটি গঠন করা হয়।

কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি
বাংলা নববর্ষ উদযাপনের কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে সভায় প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদকে আহ্বায়ক করে ২৪ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এই কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন।

শৃঙ্খলা উপকমিটি
কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নববর্ষ উদযাপনের লক্ষ্যে দুটি উপকমিটি গঠন করা হয়। এগুলো হচ্ছে শৃঙ্খলা উপকমিটি ও মঙ্গল শোভাযাত্রা উপকমিটি। ১২ সদস্যবিশিষ্ট শৃঙ্খলা উপকমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী এবং সদস্য সচিব সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. লিটন কুমার সাহা।

শোভাযাত্রা উপকমিটি
৩২ সদস্যবিশিষ্ট মঙ্গল শোভাযাত্রা উপকমিটির আহ্বায়ক চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন এবং সদস্য সচিব সহকারী প্রক্টর মো. নাজির হোসেন খান।