যে কারণে নববর্ষের দিনে ঢাবি এলাকায় লোক সমাগম কম

রাজধানীর উৎসব মানেই নানান রকম সাজ-পোশাকে ঘুরে বেড়ানো। বিশেষ করে যে কোনও উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থাকে রমরমা। পহেলা ফাল্গুন, হেমন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস এবং পহেলা বৈশাখসহ উৎসবের দিনগুলোতে এই এলাকায় ঘুরতে আসেন নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। এই দিনগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা পরিণত লোকে লোকারণ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও ঢাকা শহরে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘুরতে আসেন সাধারণ মানুষও। কিন্তু শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে দেখা যায়নি চিরচেনা সেই রূপ। সকাল বেলা মঙ্গল শোভাযাত্রায় কিছুটা লোকসমাগম হলেও সারা দিন ঘুরতে বেরোনো আসা লোক তেমন একটা দেখা যায়নি।

দুয়েকজন যারা ঘুরতে বেরিয়েছেন, তারাও তীব্র গরমে হাঁপিয়ে উঠেছেন। তারা বলছেন, গ্রীষ্মের তীব্র গরমে লোকজন তেমন কেউ ঘুরতে বের হননি। তাছাড়া, এসব উৎসবে ঢাবি ক্যাম্পাসে লোকসমাগমের বেশিরভাগই থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিকে এরইমধ্যেই ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় অনেকেই পাড়ি জমিয়েছেন গ্রামে। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে লোক সমাগম খুব একটা চোখে পড়ছে না।

ঢাবি-04

বান্ধবীকে ঘুরতে বের হয়েছেন থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল করিম। তিনি বলেন, ‘আজ বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। আমাদের সংস্কৃতির অনন্য একটি অংশ এই উৎসব। বান্ধবীকে ঘুরতে বেরিয়েছি। নিজের বিভাগেরও প্রোগ্রাম রয়েছে নববর্ষ উপলক্ষে, দেখতে আসলাম।’

লোকসমাগম কম প্রসঙ্গ উঠলে তিনি বলেন, ‘আসলে যে গরম পড়েছে, তাতে ঘুরতে বেরোনো আসলেই মুশকিল। মঙ্গল শোভাযাত্রায় কিন্তু ভালোই লোক সমাগম ছিল। কিন্তু রোদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাই চলে গেছেন। তাছাড়াও ঈদের ছুটিতে অনেকেই গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। স্বাভাবিক কারণে লোক অনেক কম।’

ঢাবি-01

নববর্ষকে বরণে নানা আয়োজন

বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ বরণ করে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়েছে নানা আয়োজন। সকালে চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে ‘বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি’ প্রতিপাদ্যকে ধারণ করে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এতে নানা বয়সের মানুষের ছিল সরব উপস্থিত ও অংশগ্রহণ। 

এরআগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সংগীত বিভাগের আয়োজনে নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে আয়োজন করা হয়-'শুভ নববর্ষে-১৪৩০' শীর্ষক সংগীত অনুষ্ঠান। সকাল পৌনে ৯টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। সকাল ১১টায় এই অনুষ্ঠান শেষ হয়। 

0101

সকাল ১১টায় টিএসসি এলাকায় স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে খেলাঘর ঢাকা মহানগর কমিটির উদ্যোগে আয়োজন করা হয় 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলো' শীর্ষক অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. মুহাম্মদ সামাদ। তিনি উপস্থিত সবাইকে নববর্ষের এই দিনে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এরপর শিশু-কিশোররা নানান সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিবেশন করেন। 

একই সময়ে (১১টা) বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট মণ্ডলে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডি বিভাগের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠান। এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন নাট্যব্যক্তিত্ব রহমতুল্লাহ, নাট্যব্যক্তিত্ব ও বিভাগের শিক্ষক ওয়াহিদা মল্লিক জলি। 

দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আশিকুর রহমান লিয়ন। এসময় তিনি বলেন, আমাদের এই অনুষ্ঠান আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে উদযাপন করে আসছি। আমরা জাতীয় স্বীকৃতির জন্য আবেদন জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষ আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এই অনুষ্ঠান আমরা শিক্ষার্থীদের ও বিভাগের অর্থায়নে করে থাকি। কোথাও থেকে কোনও সহযোগিতা পাই না।’