২৫ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের সমাবেশ

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে সোমবার (১ মে) দেশব্যাপী মে দিবস পালিত হয়। ঢাকার আশুলিয়ায় সকালে এবং বিকালে নারায়ণগঞ্জে, গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাসে এবং চট্টগ্রামে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি মে দিবসের সমাবেশ করেছে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশে আজকে মে দিবসের প্রধান অর্জনগুলোই হারিয়ে যেতে বসেছে। ৮ ঘণ্টা কাজ বা শ্রম, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম এবং ৮ ঘণ্টা বিনোদন— এই মৌলিক অর্জনগুলো পুরোপুরি বাংলাদেশে কার্যকর হয়নি। গার্মেন্ট শিল্পে কৌশলে ওভারটাইম করিয়ে নেওয়া হয়। জেনারেলের নামে ঈদের সময় শ্রমিকদের ওপর অতিরিক্ত কাজ চাপানো হয় এবং সে সময় সাপ্তাহিক ছুটিতে ব্যত্যয় ঘটানো হয়।

তারা বলেন, ২০১৮ সালের সর্বশেষ নিম্নতম মজুরির ৮ হাজার টাকা ঘোষিত হওয়ার পর আজকে কয়েকদফায় মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়েছে অনেকক্ষেত্রে শতভাগেরও বেশি। কিন্তু শ্রমিকদের বেতন বাড়েনি। ফলে বর্তমান বাজারদরে শ্রমিক ও মেহনতী মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। শ্রমিক অঞ্চলগুলোতে একটি ছোট্ট বাসার ভাড়া সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকায় গিয়েও ঠেকছে। সেখানে আগের বেতন যেকোনও যুক্তিতেই অগ্রহণযোগ্য। আর মেনে নেওয়া যায় না।

শ্রমিক নেতার বলেন, কারখানায় মানসম্মতভাবে অধিক উৎপাদনের স্বার্থেই শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে হয়। এটাই দুনিয়াব্যাপী নিয়ম— আয়ের স্টান্ডার্ট মেনটেন করতে হবে। হিসাব করতে হবে— শরীরে শক্তি উৎপাদনের জন্য ন্যূনতম যে ২৮০০ কিলো—ক্যালোরির প্রয়োজন, তা বর্তমান বাজার দরে কিনতে কত টাকার প্রয়োজন?  একটা ৪ জনের পরিবারে সবার স্বাস্থ্য ব্যয়, সন্তানের শিক্ষা, পোশাক, যাতায়াত, বিনোদন ইত্যাদির খরচও লাগবে। ৮ হাজার টাকায় তা কি সম্ভব! না সম্ভব নয়।

নেতারা আরও  বলেন, এখন মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এখন তাদের দায়িত্ব হচ্ছে— শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর ২৫ হাজার টাকার দাবি মেনে নেওয়া।

গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা বলেন, কারখানায় কারখানায় অযৌক্তিকভাবে ছাঁটাই চলছে। শ্রমিকদের ঈদের ছুটি ও বেতন নিয়ে উত্থাপিত দাবির কারণেই আজকে তাদের চাকরি হারাতে হচ্ছে। বাইপাইলে ও জিরানিতে দুটি কারখানায় শত শত শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। ঈদের বন্ধেও মোবাইলের মেসেজে শ্রমিকদের নোটিশ দিয়ে তাদের ছাঁটাইয়ের খবর দেওয়া হচ্ছে। গুন্ডা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনির নামে নানা হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।  এসব অগ্রহণযোগ্য ছাঁটাই অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

সমাবেশ থেকে নেতারা মজুরি বোর্ডকে উদ্দেশ করে বলেন, অবিলম্বে পোশাক শ্রমিকদের অন্যান্য দাবিগুলো সহকারে তাদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকার ঘোষণা ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

নেতারা মে দিবসের অর্জন শ্রমঘণ্টা, সাপ্তাহিক ছুটি এবং নিরাপত্তা ও ট্রেড ইউনিয়নের দাবিকে বাস্তবায়নের জন্য দেশের সব শ্রমিকের প্রতি আহ্বান জানান।