জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযোগের বিষয়ে ইতোমধ্যে বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে দুদক। বুধবার (১৭ মে) বিকালে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন দুদকের সচিব মো. মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, আগামী ২১ ও ২২ মে দুদকে এসে বক্তব্য জানাতে বলা হয়েছে জাহাঙ্গীর আলমকে।

জাহাঙ্গীর আলমকে দেওয়া নোটিশে বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং ভুয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার আলোকে অনুসন্ধান কার্যক্রম নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই নিয়মিত অনুসন্ধান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আগামী ২২ মে সকাল ১০টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে তাকে।

অনুসন্ধানের সূত্রপাত

দুর্নীতি দমন কমিশন দুটি অভিযোগ পায়। পরে গোয়েন্দা ইউনিটের মাধ্যমে তথ্যের সত্যতা যাচাই করার সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এজন্য এক কর্মকর্তাকে দিয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা তথ্য সংগ্রহ করে প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

এছাড়াও একটি দৈনিক পত্রিকায় ‘ভুয়া অ্যাকাউন্টে মেয়র জাহাঙ্গীরের কোটি কোটি টাকা লেনদেন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ২০২২ সালের ২৫ মে প্রকাশিত সংবাদটি আগের অভিযোগের সঙ্গে সংযুক্ত করে কমিশন প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়।

অভিযোগ সংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ

গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের স্থানীয় শাখায় ‘মেয়র, গাজীপুর সিটি করপোরেশন’ নামে একটি ভুয়া অ্যাকাউন্টের তথ্য পাওয়া গেছে। সেই হিসাব সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে দুদক।

এছাড়া অনুসন্ধান টিম গাজীপুর সিটি করপোরেশন থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। এসব বিষয়ে চার জন ব্যাংক কর্মকর্তা ও সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ জনের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়।

২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন পূর্ত কাজের রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। হাট-বাজার ইজারা ও অন্যান্য রাজস্ব খাত থেকে যে রাজস্ব আদায় হয়েছে সে সংক্রান্তে যাবতীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। কনজারভেন্সি খাতে কী কী কাজ হয়েছে বা কীভাবে অর্থ ব্যয় হয়েছে, মেয়র হিসেবে জাহাঙ্গীর আলমের কর্মকালীন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের রাজস্ব খাতভুক্ত যেসব ব্যাংক হিসাব পরিচালিত হয়েছে সেগুলোর তথ্য, করোনা মহামারির সময়ে করোনা প্রতিষেধক ও খাদ্যসামগ্রী কেনার নামে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে কিনা এসব বিষয়ে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।

২০১৮ ও ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমার মাঠে বিভিন্ন খাতে ব্যয় সংক্রান্তে যাবতীয় রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়াও অভিযোগ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে।

এছাড়াও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অপর একটি অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিছুর রহমান ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কয়েকজন ঠিকাদারের বিরুদ্ধে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি টিম গঠন করা হয়। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সবার বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে।