‘প্রতি বছর ৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো’

প্যাকেটের গায়ে উল্লেখ করা মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে সিগারেট বিক্রি করে প্রতিবছর পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে সিগারেট সরবরাহ নিশ্চিতকরণের কথা বলা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত রাজস্ব আদায় ও তামাক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ইতিবাচক হিসেবে কাজ করবে।

মঙ্গলবার (১৩ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাজেট প্রস্তাব ২০২৩-২৪ এ তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপের পরিপ্রেক্ষিতে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা), ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোবাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি)।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বিএনটিটিপির প্রজেক্ট ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম হিল্লোল। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তামাক নির্মূল সম্ভব নয়। তবে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ধীরে ধীরে নিমূর্ল করতে হবে। জাতীয় বাজেটে প্রতিবছর রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে সরকার তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ ও এর ওপর করারোপ করে। অর্থমন্ত্রী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাবেও তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও এর ওপর করহার প্রস্তাব করেছেন। প্রস্তাবে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে সিগারেট সরবরাহ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট প্রজ্ঞাপনগুলোতে প্রয়োজনীয় সংশোধী আনার কথা বলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তামাক কোম্পানিগুলো সিগারেটের প্যাকেটে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য না লিখে শুধুমাত্র খুচরা মূল্য উল্লেখ করে। এই লেখার ফাঁকে তারা প্যাকেটে লেখা খুচরা মূল্যের চেয়ে ৮ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দামে সিগারেট বিক্রি করছে। কিন্তু তারা কর পরিশোধ করছে প্যাকেটে লেখা মূল্যের ওপর। এভাবে তামাক কোম্পানিগুলো বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেয়।’

হিল্লোল বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রায় ৭৭ শতাংশ ধূমপায়ী নিম্নস্তরের সিগারেট সেবন করে। বাজেট প্রস্তাবে নিম্নস্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের দাম মাত্র পাঁচ টাকা বৃদ্ধি– এর ব্যবহার কমাতে কার্যকর অবদান রাখবে না বরং প্রতি শলাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধির সুযোগে কোম্পানিগুলো প্রতি শলাকার মূল্য এক টাকা বাড়িয়ে দেবে। এটা তাদের অযাচিত মুনাফা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হবে। পাশাপাশি এই স্তরে কর হার মাত্র এক শতাংশ বৃদ্ধি করায় তা তামাক কোম্পানিকেই লাভবান করবে। এছাড়া মধ্যম ও উচ্চস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের মূল্য মাত্র দুই টাকা এবং বিভিন্ন মূল্য ও করহার বৃদ্ধি না করায় ধূমপান আরও বেড়ে যাবে।’

সংবাদ সম্মেলনে পাঁচটি প্রস্তাব উল্লেখ করা হয়। সেগুলো হলো–

বাজেট প্রস্তাব সংশোধন করে বিশেষজ্ঞদের প্রস্তাব অনুসারে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ ও করারোপ করা; এমআরপিতে বিক্রির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা; যেকোনও ধরণের মূল্য কারসাজির ক্ষেত্রে তামাক কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া; ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যে রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং ও বাজার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা চালু করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করারোপ সুনির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে আনতে একটি শক্তিশালী জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়ন করা।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন– বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, একাত্তর টেলিভিশনের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট সুশান্ত সিনহা।