ঈদুল আজহা সামনে রেখে ইতোমধ্যে কোরবানির পশু কেনা শুরু করেছেন রাজধানী ঢাকার কোরবানিদাতারা। তবে বিভিন্ন কারণে পশুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শহরের মধ্যবিত্তরা। ফলে বিগত বছরগুলোয় একা কোরবানি দিলেও এ বছর ভাগ করে কোরবানি দিচ্ছেন তারা। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ চিত্র বেড়েছে অনেক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর পশুর হাটগুলো এখনও পুরোদমে শুরু না হলেও কোরবানিদাতারা এরই মধ্যে কোরবানির প্রস্তুতি শেষ করেছেন। তবে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আয় ও ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের কারণে মধ্যবিত্ত মানুষের সামর্থ্য কমে এসেছে। ফলে অন্যান্য বছর একা কোরবানি দিলেও, এবার শরিক পদ্ধতিতে কোরবানি দেওয়ার মানুষের সংখ্যা বেড়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন খামার ও হাট ঘুরে কোরবানিদাতা ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
রাজধানীর কেরানীগঞ্জে একটি খামারে গরু কিনতে আসা মোতালেব হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছর সংসারের যাবতীয় ব্যয় মেটানোর পর ঈদুল আজহায় একাই একটা গরু কোরবানি দিতেন তিনি। কিন্তু বর্তমানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তার পক্ষে একা কোরবানি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই দুজন প্রতিবেশীর সঙ্গে ভাগে কোরবানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
মোতালেব বলেন, সারা বছর সংসারের খরচ থেকে সঞ্চয় করে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে একটা ছোট গরু নিজেই কোরবানি দেওয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু এ বছর এই টাকায় কোরবানির পশু কেনা যাচ্ছে না। তাই প্রতিবেশীদের সঙ্গে শরিক হয়ে কোরবানি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
রাজধানীর রহমতগঞ্জ পশুর হাট এলাকায় ট্রাক থেকে গরু কিনছিলেন যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা আবদুল হাই। তিনি জানান, জীবযাপনের সবকিছুর খরচ বাড়লেও আয় বাড়েনি। তাই এবার ভাইয়ের সঙ্গে শরিক হয়ে কোরবানি দিচ্ছি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঢাকায় চাহিদার তুলনায় কোরবানির পশুর সংখ্যা বেশি হলেও পশুর দাম শুনে হতাশ হচ্ছেন ক্রেতারা। পশুখাদ্যের উপকরণের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া লালন-পালনের খরচ বৃদ্ধি, ওষুধ, বিদ্যুৎ, কর্মচারীদের বেতনসহ সার্বিক উৎপাদন ব্যয় বাড়ার কারণেই এবার দাম বাড়তি রাখতে হচ্ছে বলে জানান তারা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ বছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। এর বিপরীতে কোরবানিযোগ্য পশু আছে ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি। সে হিসাবে ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু বেশি আছে। এর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া ও ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য গবাদিপশু।
দেশে প্রচলিত পশুখাদ্যের উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে সয়াবিন খৈল, গমের ভুসি, রাইস পলিশ, মসুর ভুসি, সরিষার খৈল, ভুট্টা, মুগ ভুসি ও মটর ভুসি।
খামারিরা জানিয়েছেন, বাজারে এখন প্রতি কেজি সয়াবিন খৈল ৬৮ টাকা, গমের ভুসি ৫৬, রাইস পলিশ ৩৩, মসুর ভুসি ৫৮, সরিষার খৈল ৫৫, ভুট্টা ভাঙা ৪০, মুগ ভুসি ৫৮ ও মটর ভুসি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এসব পশুখাদ্যের দাম অনেক কম ছিল। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
এর মধ্যে আবার দেশে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে দফায় দফায়। টিকতে না পেরে দেশের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে বলেও দাবি করেছে বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)।
সংগঠনটির হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে ছোট-বড় ১০ লাখের বেশি ডেইরি ও ফ্যাটেনিং খামার রয়েছে। মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই এসব খামার লোকসানে রয়েছে। অনেকগুলো বন্ধও হয়ে গেছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক (উৎপাদন) এ বি এম খালেদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, উৎপাদন খরচ বাড়ায় গতবারের তুলনায় ঢাকায় কোরবানির পশুর দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। গতবারও দেখা গেছে, বড় গরু অবিক্রীত ছিল। বাজারে ছোট গরু পাওয়া যায়নি। আয়ের তুলনায় জীবনধারণের ব্যয় বাড়ায় এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া এর একটি কারণ।