প্লাস্টিক কুড়িয়ে সংসার ও পরিবেশ রক্ষা করছেন তারা

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশ। এই সমাবেশেকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই অসংখ্য হকার পানি বিক্রি করেছিলেন উদ্যানের মাঠে। পানি পান করে সবাই যখন উদ্যানে খালি বোতল ফেলছিল, তখন তিন ভবঘুরে মো. আরিফ (৬৫), সাহেব আলী (৫২) ও রিফাত (১২) তা কুড়িয়ে মাঠের এক পাশে জমা করছিলেন বিক্রির জন্য।

প্লাস্টিকের মালামাল পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তা হয়তো সঠিকভাবে জানেন না তাদের কেউই। কিন্তু প্লাস্টিকের বস্তু উদ্যানের পরিবেশ নষ্ট করছে, সেই বিষয়ে তারা একমত। জীবন-জীবিকার তাগিদে প্লাস্টিক কুড়িয়ে বিক্রি করে উপার্জনের পথ খোঁজেন তারা। এতে একই সঙ্গে পরিবেশও মুক্তি পায় দূষণ থেকে।

উদ্যানের ভেতরে প্লাস্টিক কুড়ান মো. আরিফ। ২২ জুলাই তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গতকাল থেকে সকাল পর্যন্ত একবার দুই বস্তা বোতল কুড়িয়ে ভাঙ্গারির দোকানে নিয়ে রেখে আসছি। এখন আবার সবগুলো খুঁজে খুঁজে জমা করছি। এগুলো বিক্রির টাকা দিয়ে আমি আর আমার পরিবারের ভরণপোষণ চলে। আমি শান্তিনগর ফুটপাতে থাকি। একবার অপারেশন হয়েছিল। তাই ভারী কাজ করতে পারি না। এখন বোতল কুড়িয়েই জীবন চলে। দীর্ঘ আট-নয় বছর ধরে আমি এই কাজ করছি। আমার সঙ্গে আছেন সাহেব আলী ভাই। উনি বৃদ্ধ মানুষ। চলতে-ফিরতে কষ্ট হয়। দুজন বোতল কুড়িয়ে যা পাই, তার একটা ভাগ উনি নেন।

একটু আক্ষেপ নিয়ে আরিফ বলেন, বোতল কুড়ানোর কারণে সবাই আমারে টোকাই বলে। যা শুনতে অনেক খারাপ লাগে। মানুষ নাম ধরে না ডেকে ‘এই টোকাই’ বলে। কী আর করার। আসলেই তো আমরা টোকাই।’

 

বোতল কুড়িয়েই কেমন আয় হয়, জানতে চাইলে আরিফ বলেন, কোরবানির ঈদের আগে বোতলের কেজি ছিল ৩০ টাকা। এখন তা ২৫ টাকা। গতকাল থেকে সকাল পর্যন্ত ১৫ কেজির মতো বিক্রি করেছি। আজ সমাবেশ শেষ হতে হতে আরও বেশি জমা করে তারপর একসঙ্গে বিক্রি করবো।

সাহেব আলী বলেন, আমি ভবঘুরে। আমার দুনিয়ায় কেউ থেকেও নাই। যেখানে যখন যাই, সেখানেই থেকে যাই। বেশির ভাগ সময় এই উদ্যানের আশপাশেই থাকা হয়। বোতল খুঁজে খুঁজে তা বিক্রি করি। আমার সঙ্গে পরিবেশের কোনও সম্পর্ক নাই। জীবিকার তাগিদে আমি এটা করছি। আমার একটা মেয়ে আর দুইটা ছেলে। বউ মারা যাওয়ার পর ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, এই টুকটাক কাজ করেই তাদের বড় করছি। এখন আর তারা কেউ খোঁজখবর নেয় না। আমিও কারও ধার ধারি না। নিজে যা পারি কামাই করে কোনোমতে জীবন বাঁচাই।‌

তৃতীয় জন ১২ বছর বয়সী রিফাত বলে, আমি আমার মা আর বোনের সঙ্গে থাকি। ছোটবেলায় বাপ মারা গেছে। আগে মা মানুষের বাসা-বাড়িতে কাজ করতো। এখন মা অসুস্থ। আগের মতো কাজ করতে পারে না। তাই আমি আর আমার বোন এখন কাজ করি।

সে আরও বলে, আমি পানি বিক্রি করি আবার বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করি। আবার মাঝেমধ্যে বাদাম-বুটও বিক্রি করি। আমার ছোট বোন রিমা (৮) চকলেট বিক্রি করে। এই কাজ করে আমাদের তিনজনের দিনকাল ভালোই চলছে।