মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যু নিয়ে দেশি-বিদেশি কিছু সংগঠন মানুষদের বিভ্রান্ত করার ‘অপচেষ্টায় লিপ্ত’ হয়েছে দাবি করে এতে উদ্বেগ জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট ১৪ নাগরিক। এ বিষয়ে ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা।
রবিবার (২০ আগস্ট) গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত এক বিবৃতি পাঠানো হয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন, ইতিহাসবিদ অনুপম সেন, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী, শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, কালবেলার সম্পাদক আবেদ খান, শিল্পী শফি আহমেদ, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক আহকামউল্লাহ।
বিবৃতিতে সাঈদীর নাম উল্লেখ না করেই তারা বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সম্প্রতি একজন সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীর অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যু হওয়ার পর দেশি-বিদেশি কিছু সংগঠন বিষয়টিকে নিয়ে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে বাংলাদেশ বিরোধী ও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকারের বিরুদ্ধে কল্পিত তথ্য পরিবেশন করে বিশ্বের সাধারণ মানুষদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত।’
তথাকথিত কিছু মানবাধিকার সংগঠন ‘আশ্চর্যজনকভাবে এই মিথ্যাচার রচনায় বিশেষ ভূমিকা’ পালন করছে অভিযোগ করে তারা বলেন, ‘এই সংগঠনগুলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়াকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে তুলনা করে বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে হয় প্রতিপন্ন করতে তৎপর। তারা মহান মুক্তিযুদ্ধকে কালিমালিপ্ত করতে ও বাংলাদেশের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের সম্মুখীন করার মতো ঔদ্ধত্যপূর্ণ উচ্চারণ করছে; যা দেশের সার্বভৌমত্বের উপর সরাসরি আক্রমণ।‘
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে মানবধিকার লঙ্ঘন ও অগণতান্ত্রিক আচরণের কথা উল্লেখ করে মার্কিন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে স্যাংশন বা অবরোধ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। তারা বলেন, ‘যা শুধু ন্যাক্কারজনকই নয়, এটি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রর সার্বভৌমত্বের উপর সরাসরি হস্তক্ষেপ বলে আমরা বিবেচনা করি। দেশি-বিদেশি চক্রের এই ধরনের চক্রান্তের বিরুদ্ধে আমাদের ক্ষোভ ও তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করছি।’
তারা বলেন, ‘আমাদের স্মরণে আছে যে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে পাকিস্তান কর্তৃক পরিচালিত জেনোসাইড, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধকে তৎকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুধু সমর্থনই করেনি, পাকিস্তান সরকারকে নানা ধরনের সাহায্য অব্যাহত রেখে তারাও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনকে সহযোগিতা করেছে। তবে একথা ধন্যবাদের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ, শিল্পী ও পেশাজীবী সম্প্রদায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করে গণহত্যা ও জেনোসাইডের বিরুদ্ধে সক্রিয় অবস্থান নিয়েছিল।’
বাংলাদেশের জনগণ বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে মানবতার জয় নিশ্চিত করে বলে উল্লেখ করেন তারা। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘২০২৩-২৪ এর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমানে বাংলাদেশে যেভাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, সেই যড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেশপ্রেমিক জনগণ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’