নদীগুলো ‘হায়েনারা’ দখল করে ফেলছে: মনজুর আহমেদ চৌধুরী  

বাংলাদেশের নদীগুলো হায়েনারা দখল করে ফেলছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলাদেশের নদ-নদীর সংজ্ঞা ও সংখ্যা বিষয়ক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মারগুব মোর্শেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক প্রধান হাইড্রোলজিস্ট আখতারুজ্জামান তালুকদার।

সেমিনারে ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনায় ঢাকার আশপাশের শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ এবং বুড়িগঙ্গা দখল ও দূষণমুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। আমরা দখলমুক্ত করতে পারলেও দূষণমুক্ত করতে পারিনি। একইভাবে পদ্মা, মেঘনা, যমুনাসহ দেশের অন্য নদ-নদীগুলো দখলমুক্ত করতে পারিনি।’

তিনি বলেন,  ‘কর্ণফুলীর অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। বাংলাদেশে ইকোনমিক জোন অথিরিটি (বেজা) নদী দখল করে ইকোনমিক জোন গড়ে তুলেছে। তারা এখন বিভিন্ন কোম্পানিকে লিজ দিয়েছে। কর্নফুলী নদী শুধু পরিবেশগতভাবেই নয়, অর্থনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ।  আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে নদীর কাগজপত্র দিলেও মন্ত্রণালয় বলছে এটা নদীর অংশ না।’

নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ‘কর্ণফুলীকে লিজের নামে টুকরা টুকরো করে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। সচেতন মহল, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সবাই মিলে এই কাজ করছে। এই দখলের পক্ষে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও এনজিওকর্মী তারা শক্তভাবে দাঁড়িয়েছে। নদী রক্ষার জন্য নদী রক্ষা কমিশন নিঃসঙ্গ শেরপার মতো কাজ করছে। আমাদের পাশে কেউ নেই। আমাদের যেসব দক্ষ অফিসার  ছিল, তাদেরকে তাৎক্ষণিক (স্ট্যান্ড রিলিজ) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কারণ তারা নদ-নদী রক্ষায় দখলদারদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে ছিল।’

তিনি বলেন, ‘মেঘনা নদীর বালু সন্ত্রাসীদের ৩০০ ড্রেজারসহ উৎখাত করেছি। কিন্তু এ অভিযানে জড়িত জেলা প্রশাসককে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। মেঘনা নদী ইলিশসহ সব মাছের শ্রেষ্ঠ অভয়ারণ্য। চাঁদপুর সদরে ড্রেজার ও ট্রপেলারের আওয়াজে নষ্ট হচ্ছে এসব মাছের উৎস। আজকে তাদের পরিচয় বলতে আমার সমস্যা নেই।’

আখতারুজ্জামান তালুকদার বলেন, ‘দেশের প্রতিটি জেলার ওপর দিয়ে ২০টি নদী প্রবাহিত হয়। আর সর্বোচ্চ ৯৭টি নদী সুনামগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দেশে তেল-গ্যাস-সোনা বা সম্পদ না-ই থাকতে পারে। তবে নদীর মতো বড় সম্পদ আছে, যেটা কখনও গোনায় ধরা হচ্ছে না।’

তিনি নদীর সংখ্যা উল্লেখ করে বলেন, ৩০০ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের পদ্মা ও ইছামতি। ইছামতি নদীই আছে ১১টি, বিভিন্ন জায়গায় এই নামে পরিচিত। ২৮০ কিলোমিটারের ওপরে আছে পাঁচটি নদী। ২০০ থেকে ২৭৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৯টি নদী আছে। ১০০ থেকে ১৯৯ কিলোমিটারের মধ্যে আছে ৪২টি নদী। পাঁচটি নদী আছে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে। ১০ থেকে ৯৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আছে ৪৮০টি। ১ থেকে ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আছে ৩৭৬টি নদী। ১ কিলোমিটারের কম ৪১টি। আর দৈর্ঘ্য সম্পর্কে তথ্য নেই ৫৫টি নদীর। দেশের দীর্ঘতম নদী পদ্মা, যার দৈর্ঘ্য ৩৪১ কিলোমিটার।