আয়োজক-প্রকাশকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

বইমেলায় বিদায়ের সুর

অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৬অমর একুশে গ্রন্থমেলা শেষ হতে বাকি আর মাত্র দুদিন। শেষ সময়ে এসে বইমেলায় এখন বিরাজ করছে বিদায়ের সুর। অন্য যে কোনওবারের তুলনায় মেলায় এবার শুরু থেকেই জমজমাট উপস্থিতি ছিল পাঠক দর্শনার্থীদের। প্রথমদিকে ঘুরে ঘুরে তারা বই দেখেছেন, আর এখন যারাই মেলায় আসছেন বই কিনছেন। শেষবেলার বেচাকেনাতে খুশি প্রকাশকরাও।
যদিও এবারের মেলায় একটু যেন টক-মিষ্টির সম্পর্ক ছিল আয়োজক ও প্রকাশকদের মধ্যে।এর ফলে সারামাস জুড়েই তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন।
মেলার শুরুতেই স্টলের জন্য নির্ধারিত হওয়া স্থান নিয়ে অভিযোগ করে বেশ কয়েকটি প্রকাশনী। এরপর স্থানও পরিবর্তন করে তারা। এরপরই নিয়ম না মেনে স্টল নির্মাণ করায় ২১টি প্রকাশনীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বাংলা একাডেমি। আগামী বইমেলায় এসব প্রকাশনীকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে বলেও ঘোষণা দেন একাডেমির মহাপরিচালক। অপরদিকে এমন ঘোষণার বিপরীতে প্রকাশকরা দাবি করেন, আয়োজকদের সঙ্গে আলোচনা করেই তারা স্টল পরিবর্তন করেছেন।
মেলার কিছুদিন যেতেই প্রকাশকরা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অপ্রকাশক বিভিন্ন এনজিওকে বইয়ের স্টল বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে অভিযোগ করেন। এসব স্টলগুলোতে পাইরেটেড ও ভারতীয় লেখকদের বই বেআইনিভাবে বিক্রি হওয়া নিয়েও অভিযোগ তোলেন তারা। এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে সিসিমপুর স্টলটির বিরুদ্ধে চত্বর দখলের অভিযোগ, অতীতের  ব্যত্যয় ঘটিয়ে এবার স্টলের নাম্বার বসানোর আগেই লটারি করা হয়েছে, স্টলের ক্রম ধারাবাহিকতা না মানা, মেলায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকা ও পানীয় জলের সংকট নিয়ে অভিযোগ করেন তারা। মেলার ২১তম দিনে প্রকাশকদের এসব অভিযোগ বাংলা একাডেমির কাছে তুলেও ধরে বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি।

তবে এসব অভিযোগ আমলে না নিয়ে প্রকাশকদের দায়িত্ব-জ্ঞান নিয়ে আয়োজকরা  পাল্টা অভিযোগ করেন । মেলার আয়োজক ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রকাশকরা শুধু অভিযোগ আর ভুল ধরার বেলায় আছেন। অথচ কোনও দায়িত্বের বেলায় তারা নেই। তারা প্রকাশক এবং বইয়ের বিক্রেতা, এছাড়া আর কিছু না।

বৃষ্টির কারণে স্টলগুলোর যে ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতিপূরণ পূরণ দিতেও আয়োজক ব্যর্থ হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে গ্রন্থমেলার আয়োজন ও পরিচালনার ভার প্রকাশকদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানায় প্রকাশকদের সংগঠন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। মেলার ২৬তম দিনে সংবাদ সম্মেলন করে তারা আগামী বছর থেকেই মেলার ভার প্রকাশকদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানায়।

প্রকাশক-আয়োজকদের এই পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মাঝেই শেষ  মুহূর্তে জমে উঠেছে প্রকাশক ও পাঠকদের সম্পর্ক। শুরুতে হালকা মেজাজে থাকা বাঙ্গালির প্রাণের এই মেলা বিদায় ক্ষণে পেয়েছে তার পূর্ণতা। তালিকা ধরে এখন বই কিনছেন পাঠকরা। অপরদিকে বেচাকেনা বেড়ে যাওয়ায় সব অভিযোগ ভুলে প্রকাশকদের মুখেও ফুটেছে হাসির ঝলক। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন এমন হাসি বিস্তৃত হোক আগামী মেলাতেও। আবারও প্রাণোচ্ছ্বল হয়ে উঠুক বাঙ্গালির প্রাণের এই মেলা।

/এসআর/এসএম/এপিএইচ/