গাড়ি দুর্ঘটনার পর লুকোচুরি পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার

সরকারি বিলাসবহুল গাড়ি বরাদ্দ করা হয় অফিসিয়াল কাজে ব্যবহারের জন্য। ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু অনুমতি ছাড়া অফিসিয়াল গাড়ি ব্যক্তিগত ব্যবহার করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের এক কর্মকর্তা। এরপর দুর্ঘটনার বিষয়টি গোপন করেন তিনি। ঘটনা আড়াল করার জন্য নিজেই সেই গাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নেন। কিন্তু এক কান-দু’কান করে জানাজানি হওয়ায়, খোদ পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। আলোচিত এই কর্মকর্তার নাম ডা. মাহমুদুর রহমান। তিনি পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পরিচালক (এমসিএইচ) ও লাইন ডিরেক্টর (এমসিআরএএইচ) হিসেবে কর্মরত।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর সূত্র জানায়, গত ২৬ সেপ্টেম্বর ডা. মাহমুদুর রহমান স্ত্রীসহ তার অফিসিয়াল গাড়ি (প্রাডো জিপ, ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৫৯৮১) নিয়ে অফিসের অনুমতি ছাড়াই ব্যক্তিগত কাজে জামালপুরে গ্রামের বাড়িতে যান। এ সময় সরকারি চালক রুহুল তার সঙ্গে ছিলেন। ওই দিন রাত তিনটার দিকে জামালপুর থেকে ঢাকায় ফেরার পথে গাজীপুরের কোনাবাড়িতে গাড়িটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। পরে পুলিশ এসে গাড়িটি উদ্ধার করে কোনাবাড়ি থানায় নিয়ে যায়। পরদিন সকালে গাড়িটি নিয়ে আসা হয় ঢাকায়।

সূত্র জানায়, কোনও সরকারি গাড়ি অফিসিয়াল কাজে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে সাধারণত অধিদফতরের খরচে সরকারিভাবে মেরামত করা হয়। কিন্তু ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার কারণে দুর্ঘটনার বিষয়টি চেপে যান ডা. মাহমুদুর রহমান ও তার গাড়িচালক রুহুল।

জানা গেছে, গাড়িটি ঢাকায় এনে মহাখালীতে মামুনের গ্যারেজে নিজ খরচে মেরামত করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে গাড়িচালক রুহুল গাড়ি নিয়ে জামালপুরে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, অফিসিয়াল ভিজিটে গাজীপুর গিয়েছিলেন তিনি। সন্ধ্যার দিকে গাজীপুর থেকে ফেরার পথে সড়ক বিভাজকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গাড়ির সামনের বাম্পার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তেমন বড় কিছু নয়। তবে দুর্ঘটনার শিকার গাড়িটির একাধিক ছবি বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে। তাতে দেখা গেছে, গাড়ির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে গেছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দকৃত গাড়ি অফিসিয়াল কাজে ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও বেশিরভাগই ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। এমনকি অনুমতি ছাড়াই অনেকে ঢাকার বাইরে ব্যক্তিগত ভ্রমণেও অফিসের গাড়ি ব্যবহার করেন। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অধিদফতরের পরিচালক (অর্থ) নিয়াজুর রহমান অনুমতি ছাড়াই সরকারি গাড়ি নিয়ে বান্দরবানে বেড়াতে যান। সেখানে গিয়ে গাড়িটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে নিয়াজুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রাণে রক্ষা পেলেও সরকারি গাড়িটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে অধিদফতর থেকে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়, যাতে কেউ সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার না করেন। এছাড়া কোনোভাবেই যেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সরকারি গাড়ি কেউ এক জেলা থেকে আরেক জেলায় নিয়ে না যান। পরবর্তী সময়ে নিয়াজুর রহমানকে পরিচালকের (অর্থ) পদ থেকে সরিয়ে বরিশালে বদলি করা হয়।

সর্বশেষ সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে নিয়ে দুর্ঘটনায় কবলিত হওয়া পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পরিচালক ডা. মাহমুদুর রহমান অবশ্য সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছেন। জানান, তিনি ব্যক্তিগত কাজে গাড়িটি নিয়ে জামালপুরে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় তিনি নিজেও আহত হয়েছেন। বিষয়টি তিনি আনঅফিসিয়ালি মহাপরিচালককে জানিয়েছেন। নিজের খরচে গাড়িটি মেরামতের ব্যবস্থাও করেছেন।