আদালতে ছাত্রদল নেতার স্বীকারোক্তি

পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত

বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করা ছিল পরিকল্পিত। এ জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের আগে থেকেই নির্দেশনা দেওয়া ছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পল্টন ও কাকরাইল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

সোমবার (২০ নভেম্বর) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম শফিউদ্দিনের আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই তথ্য জানিয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আমান উল্লাহ। আমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আমান উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের এই সমাবেশ (২৮ অক্টোবরের সমাবেশ) ছিল সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করার। আমাদের কিছু কিছু নেতাকর্মী পূর্বের নির্দেশমতো একটি বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য জড়ো হয়েছিল। আমাদের টার্গেট ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করে তাদের (পুলিশের) সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানো। সেই মতে ঢাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেমন—ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজের প্রায় সব ছাত্রনেতা এসেছিল। আমাদের প্রতি নির্দেশনা ছিল যেকোনোভাবে কোনও ব্যক্তি বা পুলিশ সদস্যকে আক্রমণ করা।’

জবানবন্দিতে আমান উল্লাহ বলেন, ‘বেলা দুইটা থেকে আমি নেতাকর্মীসহ মঞ্চের পাশেই হোটেল ভিক্টোরিয়ার সামনে ছিলাম। ১৫-২০ জন নেতাকর্মী আমার আন্ডারে ছিল। আমাদের সবারই নির্দিষ্ট জায়গা ছিল ও থাকে। বেলা পৌনে তিনটার দিকে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। মূল সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল নাইটিঙ্গেল মোড় ও সভা মঞ্চের আশপাশে। আমাদের ছেলেদের সাথে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে অংশ নেয় জিয়াউর রহমান খন্দকার, ইমরান, অভি, শাওন, সজীবসহ আরও কয়েকজন। পুলিশের সাথে আমাদের ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পুলিশ টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও ছররা গুলি করে। এতে সংঘর্ষ আরও ছড়িয়ে পড়ে। তখন সুযোগ পেয়ে আমাদের দলের নেতাকর্মীরা একজন পুলিশ সদস্যকে একা পেয়ে বেধড়ক মারধরে হত্যা করে। ওই পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলেই মারা যান।’

জবানবন্দিতে আমান উল্লাহ বলেন, ‘পুলিশ সদস্যকে কারা কারা মেরেছে তাদের নাম জানা নেই, তবে চেহারা দেখে হয়তো বলতে পারবো। ওই পুলিশ সদস্য রাস্তায় আহত হয়ে পড়ে যাওয়ার পর তাকে পেটানো হয়। এতে সে মারা যায়। আমি ওইদিন সেখান থেকে বেলা সাড়ে ৪টার দিকে মিরপুরের বাসায় চলে যাই। পরে পুলিশ আমাকে আটক করে।’

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে আমান উল্লাহ জানান, ২০১৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বাবার নাম মৃত আব্দুর রহিম মুন্সী, গ্রামের বাড়ি বরগুনার পরীরখাল এলাকায়।

আমান উল্লাহ জবানবন্দিতে বলেন, ‘আমি দুপুর দেড়টার দিকে সমাবেশস্থল পল্টনে যাই। আমাদের দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেবের মাধ্যমে আগেই ওই সমাবেশের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই দিন মঞ্চে ছিলেন মির্জা ফখরুল, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ, আমিনুল হক, আব্দুস সালাম, ডা. ফরহাদ, লিটন, ড. মঈন খান, শামসুজ্জামান দুদু সাহেব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নজরুল ইসলাম খানসহ সকল জাতীয় নেতা। আমাদের সমাবেশ শুরু হয় সকাল ১১টা থেকেই। নেতাকর্মীরাও সকাল থেকেই জড়ো হয়েছিলেন। বাসা দূরে হওয়ায় আমার আসতে একটু দেরি হয়।’

উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। তবে দুপুরের দিকে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হলে সমাবেশটি পণ্ড হয়ে যায়। পরে পুরো এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এতে পুলিশের এক সদস্যসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য ও বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন। ওই ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় শতাধিক মামলা দায়ের করেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাসসহ শীর্ষ নেতাদের অনেককেই গ্রেফতার করা হয়।