দেশে পোল্ট্রি মুরগি থেকে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের আশঙ্কা

বাংলাদেশের বাজারগুলোতে পোল্ট্রি মুরগি জবাই করার সময় যে রক্ত খোলা জায়গায় বা বাতাসের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে তা থেকে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের আশঙ্কা দেখা গেছে। এর আগে ২০০৮ সালে এ ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায় দেশে এবং সারা দেশের ৫২টি জেলায় পাঁচ শতাধিক মুরগির খামার পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।

সম্প্রতি স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায় অনুষ্ঠিত দ্য ইউরোপিয়ান সায়েন্টিফিক ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইনফ্লুয়েঞ্জা (ইএসডব্লুআই)-এর নবম আন্তর্জাতিক ইনফ্লুয়েঞ্জা সামিটে উপস্থাপিত এক গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে।

গবেষণাটি পরিচালনা করেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)-এর গবেষক আইরীন শান্তা, রেবেকা সুলতানা, খালিদ সাইফুল্লাহ, মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, ড. এনায়েত হোসেন, নাদিয়া রিমি, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের মাহবুবুর রহমান এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নুরনবী আহমেদ। এতে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।

এই গবেষণায় শহর এবং গ্রামীণ এলাকার হাঁস-মুরগির দোকান নির্বাচন করে সেখান থেকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ বায়োঅ্যারোসোল এবং বায়োঅ্যারোসোল সাইক্লোন স্যাম্পলার-এর মাধ্যমে বায়ুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ফিল্ড প্রসেসিংয়ের পরে নমুনাগুলো আইসিডিডিআর,বি ল্যাবরেটরিতে রিয়েল টাইম ওয়ান-স্টেপ রিভার্স ট্রান্সক্রিপ্টেজ পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (আরটি-পিসিআর)-এর মাধ্যমে ইনফ্লুয়েঞ্জা এ, এইচ৫, এইচ৭ এবং এইচ৯ সাবটাইপগুলোর জন্য বায়ু নমুনাগুলো পরীক্ষা করা হয়েছিল।

ফলাফলে দেখা গেছে, মোট ৬৪টি বায়ু নমুনার আশি শতাংশ (৫২টি) এবং এর ১৯২টি উপ-নমুনার ৭২ শতাংশ (১৩৯টি) ইনফ্লুয়েঞ্জা আরএনএ’র জন্য ইতিবাচক ছিল।

গবেষণায় উঠে আসে—২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা এ এইচ৫এন১ এবং এ এইচ৯এন২-এর আটটি ‘মানব কেস’ রিপোর্ট করা হয়েছে। এই কেসগুলোর বেশিরভাগই হাঁস-মুরগি জবাই বা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিল। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (এআইভি) দ্বারা সংক্রমিত হাঁস-মুরগি জবাই করা রক্ত অ্যারোসোল তৈরি করতে পারে, যা ভাইরাস ধারণ করতে পারে। জীবন্ত হাঁস-মুরগির বাজারে উৎপন্ন হওয়া এই ইনফ্লুয়েঞ্জার কণা (অ্যারোসোল) মানুষের মধ্যে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে।

পোল্ট্রি জবাই এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাজারের খোলা পরিবেশ এআইভি যুক্ত অ্যারোসোল তৈরি করতে পারে, যা আশঙ্কাজনক বলে গবেষণায় দাবি করা হয়। গবেষকদের মতে, এই গবেষণা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার বিস্তার ঠেকানোর জন্য সরকারকে বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করবে। পাশাপাশি হাঁস-মুরগি জবাই এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় ভাইরাস কণার অ্যারোসোলাইজেশন হ্রাস করতে এবং স্পিলওভারের ঝুঁকি কমানোর জন্যও সরকার উদ্যোগ নিতে পারবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম ভূইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা এর আগেও বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এর আগে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের শরীরে এ ভাইরাস খুব বেশি ক্ষতিকর না হলেও আমাদের উন্নত বিশ্বের মতো সচেতন থাকতে হবে।

এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত হলে করণীয় সম্পর্কে এ অধ্যাপক জানান, যখন কোনও খামার বা এলাকায় ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে, সেটিকে সঙ্গে সঙ্গে আইসোলেট (সঙ্গনিরোধ) করে ভাইরাসটির ছড়ানো বন্ধ করে দিতে হবে। ভাইরাসটির সংক্রমণ হলেই মুরগি বা খামার পুড়িয়ে ফেলতে হবে এমন কোনও কারণ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ভাইরাস ঘটিত কোনও রোগ নির্মূল করা কঠিন, তবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আবার অনেক সময় প্রাকৃতিক কারণেই এটা নির্মূল হয়ে যায়।