প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়ে দেশের বিভিন্ন জেলার ডিসি ও জেলা পরিষদের সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এপিএস পরিচয়ে আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাসে প্রতারণার অভিযোগে ২ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শনিবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অভিযান চালিয়ে ডিবির একাধিক বিভাগ তাদের গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে প্রতারক শহিদুর রহমান ওরফে শহিদুল হক ওরফে দিপুকে (৫৫) গ্রেফতার করেছে ডিবি তেজগাঁও বিভাগ ও মনিরুল ইসলাম ভুট্টোকে (৩৫) গ্রেফতার করেছে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ।
রবিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ তথ্য জানান।
হারুন বলেন, গ্রেফতার শহিদুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিদেশে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। কিন্তু মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে বর্তমানে ইয়াবার কারবার ও প্রতারণা করে আসছেন। বেশ কিছু দিন ধরে শহিদুর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকী পরিচয়ে জামালপুর, শেরপুর জেলার ডিসিসহ বিভিন্ন জেলা পরিষদ কার্যালয়ের প্রধান নির্বাহীদের ফোন করে প্রতারণার করে আসছিল। এমনকি সে বিয়ের দাওয়াতের নামে স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে নিজের বন্ধুর সঙ্গেই প্রতারণা করে।
প্রতারক শহিদুর রহমানকে গ্রেফতারের পর জানা গেছে, সে ইয়াবা কারবারে জড়িত। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইন ও প্রতারণাসহ ১০টিরও বেশি মামলা রয়েছে।
গোয়েন্দা প্রধান হারুন আরও বলেন, শহিদুরের উদ্দেশ্য ছিল মাদক ও প্রতারণার মাধ্যমে ১০-১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে দুবাই রেসিডেন্স পারমিট নিয়ে চলে যাওয়া। মাদক ও প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে এক ডজন মামলার আসামি শহিদুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও পড়াশোনা করে। এরপর নিউ ইয়র্কে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, কানাডা, উগান্ডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে। পরে দেশে ফিরে এসে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকের টাকা সংগ্রহে ইয়াবার কারবার শুরু করে। সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম পরিচয় ব্যবহার করে প্রতারণা চালায়। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর নিউ মার্কেটসহ দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার আবু জাফর রাজুর পরিচয়ে বিভিন্ন প্রার্থীকে কোটি টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে আরেক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর)। গ্রেফতার মনিরুল ইসলাম ভুট্টোর (৩৫) বিরুদ্ধে ডাকাতি, ধর্ষণ ও মাদক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। সে একাধারে মাদক ব্যবসা, ধর্ষণ, ডাকাতি ও প্রতারণা করে আসছিল। ভুট্টো বিএনপি কর্মী। কিন্তু প্রটোকল অফিসার পরিচয়ে প্রতারণা করে। বিভিন্ন ব্যক্তিকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রতারণার চেষ্টা করে আসছিল।
সরকারি কর্মকর্তা পরিচয়ে কেউ কোনও সুবিধা দাবি করলে যাচাইয়ের অনুরোধ জানিয়ে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, কিছু প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে ট্রু কলার ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার নাম সেট করে প্রতারণা করে আসছে। তারা এসব পদ ব্যবহার করে মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে। তাই এসব পরিচয়ে কেউ ফোন করলে যাচাই করে নিতে হবে।