কোন পর্যায়ে আছে মিতু হত্যা মামলা

মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় বিচার কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। মিতুর স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারসহ সাত জনের বিরুদ্ধে এই বিচার কার্যক্রম চলছে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে। সর্বশেষ ২৮ নভেম্বর ৯৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। বাকিদের সাক্ষ্যগ্রহণের পর আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য হতে পারে।

আদালত ও বিচার সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে চট্টগ্রাম মহানগরের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাত করে বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করা হয়। পরদিন (৬ জুন) বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রথমে থানা পুলিশ ও পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করে। তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১২ মে পিবিআই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দেয় আদালতে। ওই দিনই বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ বাদী হয়ে জামাতা বাবুল আক্তারসহ আট জনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় মিতু হত্যার ঘটনায় নতুন করে মামলা দায়ের করেন। উল্লেখ্য, মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা।

পিবিআই’র অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থাকাকালে বাবুলের সঙ্গে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক নারী কর্মকর্তার সম্পর্ক হয়। ওই সম্পর্কের জেরে বাবুলের পরিকল্পনায় মিতুকে হত্যা করে ভাড়াটে খুনিরা। ভাড়াটে খুনিদের তিন লাখ টাকায় ভাড়া করা হয় বলে উল্লেখ করা হয় অভিযোগপত্রে। ২০২৩ সালের ১৩ মার্চ অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে আদালত মিতু হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু করেন।

মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারএসপি বাবুল আক্তার ছাড়াও অভিযোগপত্রে আরও যাদের অভিযুক্ত করা হয় তারা হলেন—মো. কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম ওরফে কালু ও শাহজাহান মিয়া। তাদের মধ্যে বাবুল আক্তার, ওয়াসিম, আনোয়ার ও শাহজাহান কারাগারে আছেন। এহতেশামুল জামিনে, কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা ও খাইরুল ইসলাম কালু ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন।

বাবুল আক্তারসহ আসামিপক্ষের আইনজীবী কফিল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ মামলায় ৯৭ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ১৬ জানুয়ারি (২০২৪) সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। সরকার পক্ষ কতজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করতে চায়, সেটা তিনি জানেন না। কবে নাগাদ বিচার কার্যক্রম শেষ হতে পারে, সে সম্পর্কেও ধারণা নেই এই আইনজীবীর।

তবে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. আবদুর রশিদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়ে গেছে। এখন যেসব সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে, তারা মূলত ‍মামলার জবানবন্দি গ্রহণ, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরিসহ বিভিন্ন দালিলিক কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ৫০ থেকে ৬০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হলে হয়তো আর প্রয়োজন নাও হতে পারে। তখন পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করতে পারেন আদালত।’ আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যেই মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন আইনজীবী মো. আবদুর রশিদ।   

মামলার বাদী ও বাবুল আক্তারের শ্বশুর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, এ পর্যন্ত মামলার বিচারিক কার্যক্রমে তিনি সন্তুষ্ট। আশা করছেন শেষ পর্যন্ত তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।

অপরদিকে, ২০২২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর এসপি বাবুল আক্তারসহ চার জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বনজ কুমার মজুমদার। বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলা নিয়ে প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন ফেসবুক ও ইউটিউবে মিথ্যা তথ্য প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে তিনি মামলাটি দায়ের করেন। গত ৯ এপ্রিল বাবুল আক্তারসহ চার জনের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানার পুলিশ ঢাকার সাইবার আদালতে এ মামলার চার্জশিট জমা দেয়। তবে বাবুল আক্তার ও তার বাবা মো. আবদুল ওয়াদুদ মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে না নিয়ে তাদের অব্যাহতি দেন আদালত। বাবুল আক্তারের ভাই হাবিবুর রহমান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ আমলে নিয়েছেন।