বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্য নিহতের ঘটনায় আসকের উদ্বেগ

যশোরের বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে বিজিবি সদস্য নিহতের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। একইসঙ্গে দ্বিপাক্ষিক তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণেরও জোর দাবি জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় তারা। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেছেন, ‘সীমান্তে বিজিবি সদস্যসহ বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ভারতীয় বিএসএফ-এর এমন আচরণ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি ভারতের অবজ্ঞারই পরিচায়ক।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত ২২ জানুয়ারি যশোরের বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে একজন বিজিবি সদস্য (রইস উদ্দিন) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার দুই দিন পর ২৪ জানুয়ারি নিহত সিপাহী মোহাম্মদ রইস উদ্দিনের মরদেহ যশোরের শার্শার শিকারপুর সীমান্তের কাছে বিজিবি’র কাছে হস্তান্তর করে বিএসএফ। আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)- এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। পাশাপাশি, দ্বিপাক্ষিক তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানায়, বিজিবি’র পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে,  গত ২২ জানুয়ারি সোমবার ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে বিজিবি যশোর ব্যাটালিয়নের ধান্যখোলা বিওপি'র জেলেপাড়া পোস্ট সংলগ্ন এলাকায় ভারত থেকে আসা একদল গরু চোরাকারবারিকে সীমান্ত অতিক্রম করে আসতে দেখে বিজিবির টহল দল তাদের ‘চ্যালেঞ্জ' করে। চোরাকারবারিরা তখন দৌড়ে ভারতের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বিজিবি টহল দলের সদস্য সিপাহী মোহাম্মদ রইস উদ্দিন চোরাকারবারিদের ধাওয়া করতে গিয়ে ঘন কুয়াশার কারণে দলবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন৷ প্রাথমিকভাবে তাকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও পরবর্তীকালে জানা যায়, তিনি বিএসএফের গুলিতে আহত হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৷ঘটনার পরপরই এ বিষয়ে ব্যাটালিয়ান কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠক করা হয়। তখন জানা যায়, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রইস উদ্দিন মারা গেছেন।

অপরদিকে, বিএসএফ-এর পক্ষ থেকে সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের মুখপাত্র ডিআইজি একে আর্য গণমাধ্যমকে বলেছেন, ২২ জানুয়ারি রাতে বনগাঁ সীমান্তে বিএসএফের এক জওয়ান একটি গরু পাচারকারী দলকে চিহ্নিত করে৷ বিএসএফ-এর জওয়ান ওই পাচারকারীদের ধাওয়া করলে তারা পাল্টা আক্রমণ চালায়৷তার দাবি, পাচারকারী দলটি ভারতের সীমান্তের ভেতরে প্রায় ১০০ মিটার ঢুকে গিয়েছিল। পালানোর সময় সীমান্ত থেকে ৫০ মিটার দূরে বিএসএফ-এর জওয়ান গুলি চালায়৷ গুলিবিদ্ধ হয়ে সেখানেই এক ব্যক্তি পড়ে যান। এরপর বিএসএফ-এর বাকি দল এসে ওই ব্যক্তিকে তুলে হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তির কাছে কোনও পরিচয়পত্র ছিল না বলে দাবি বিএসএফ-এর।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের গুলিতে বেসামরিক বাংলাদেশি নাগরিক নিহতের সংবাদ প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তবে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য হত্যার ঘটনা নজিরবিহীন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী অন্তত ৩১ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে ২৮ জন গুলিতে ও একজন শারীরিক নির্যাতনের কারনে মৃত্যুবরণ করেন। এসময়ে, বিএসএফ-এর নির্যাতনে আহত হন আরও ৩১ জন। ২০২২ সালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২২টি। তখন আহত হয়েছিলেন ১৫ জন এবং অপহরণের শিকার হয়েছিলেন ১১ জন। 

আইন ও সালিশ কেন্দ্র  (আসক) বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্য নিহতের ঘটনায় বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। আসক তদন্তাধীন বিষয়ে দু,পক্ষকেই সংযত ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। আসক মনে করে, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া, আসক বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে যেকোনও ধরনের মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা, নির্যাতন বন্ধে ভারত সরকারকে তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছে।